Join our telegram Contact Us Join Now!

একটি চাঁদনী রাত - A moonlit night

 


রাত প্রায় বারোটা বাজে।একটা পাগলীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।ছেঁড়া ওড়নাটা হাতে নিয়ে পাগলীটা পালাচ্ছে নিজের ইজ্জত নিয়ে।পেছন দিকে ধাওয়া করছে দুটি বখাটে।আমাকে দেখেই ওরা থমকে দাঁড়ালো এবং উল্টো দিকে দৌঁড় দিলো।অদূরে একটা গাছের নিচে বসে পাগলী মেয়েটা দাঁত গুলা বের করে খিক খিক করে হাসছে।এই হাসিটা হয়তো ইজ্জত নিয়ে বেঁচে ফেরার হাসি।


বখাটেদের লুলুপ দৃষ্টি থেকে রাস্তার পাগলীরা পর্যন্ত রেহাই পায় না।হায়নার মতো ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাগলীর নোংরা দেহে,আর আহরণ করে জৈবিক শুখ।রাতের অন্ধকার আর নিরবতায় মিশে যায় ধর্ষিতা পাগলীদের চিৎকার আর আর্তনাদ।এরকম অহরহ ধর্ষণ যা সুশীল সমাজের চোখে পড়ে না- রাতের অন্ধকারেই ঢাকা থাকে।রাস্তার পাগলীরা 'মা' হয় বাবা হয় না কেউ।ওদের যেমন একটা দেহ আছে তেমনি আছে একটা মন-শুধু চিন্তা গুলা এলোমেলো।তারপরও ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে উস্কোখুস্কো চুল গুলা দুলিয়ে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে।


"কেউ পাগল হয়ে সমাজে জন্ম নেয় না।কোন না কোন ভাবে এই সমাজই তাদেরকে পাগল বানিয়ে দেয়।প্রতিটা পাগলদের জীবন একেকটা উপন্যাস"।


অসুস্থ ফুফাকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম উনার বাসায়।আত্মীয়-স্বজন সবাই জড়ো হয়েছেন।দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ।

অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার কারণে সবাই ধরে নিচ্ছে তিনি আর বাঁচবেন না।কেউ কেউ রুমে প্রবেশ করে হাউমাউ করে কান্না শুরু করছে। কেউবা তাসবি হাতে বড় তাসবি তেলাওয়াত করছে।আবার কেউ উনার ব্যাবহার করা জিনিস গুলা নাড়িয়ে দেখছে আর স্মৃতিচারণ করে একা একা বিলাপ করছে।

তরুণীগুলা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে ওদের চোখ লাল - ঠোঁটগুলা কাঁপছে।মেয়েরা যখন ভেতর থেকে কষ্ট অনুভব করে তখন ওদের ঠোঁট কাঁপে।

ফুফার বড় ছেলে অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়েছেন।বার বার ফোন করে ড্রাইভারকে তাড়া দিচ্ছেন।এত দেরি হচ্ছে কেন।আবার ভেতর থেকে কেউ কেউ চেঁচিয়ে উঠছে-বুড়োটা মরে যাওয়া পরে গাড়ি আসবে নাকি?

"হয়তো এই বুড়োটাই কিছু দিন আগে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিলো।তখন এত সব হিতৈষী নিজেদের জগতে ব্যস্ত ছিলেন।তখন হয়ত আদরের ছেলে স্ত্রী-সন্তানের আবদার মেটাতে ব্যস্ত ছিলো।"

" অ্যাম্বুলেন্সের হর্ণ শোনা যাচ্ছে।এখনি ফুফাুকে নিয়ে চলে যাওয়া হবে হসপিটালে।সবাই কান্নার রুল তুললো।আমি ফুফার পাশে গিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।ডান চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।বাম হাত দিয়ে বুকের ডান পাশটা চেপে ধরে আছেন।ডান হাত দিয়ে বার বার ইশারা করে বুঝাতে চাচ্ছেন আমাকে নিও না - আমি যাবো না।ফুফার সেই ভাষা কেউ বুঝতে চায় না।ওরা উনাকে বাঁচাতে চায়।হঠাৎ ফুফা স্পষ্ট ভাবে বলে উঠলেন- "আমি এখানে মরবো"

তারপর কিছু একটা বলতে গিয়ে আর বলতে পারলেন না"

উনার ঠোঁট নড়ছে-কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন।বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে আছেন!

আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে।আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম।লাফ দিয়ে ফুফাতো ভাইয়ের পায়ে পড়লাম- আর বলতে লাগলাম-

আমার ফুফাকে নিও না।উনি বাঁচবেন না। উনার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করুন।উনি আমাদের চোখের সামনে মরতে চান।দেখো ভাই—ফুফা কেমন করে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।তোরা আমার ফুফাকে নিয়ে যেও না।

আমার কথায় ওরা কর্ণপাত করলো না।ফুফাকে এম্বোলেন্সে তুলে হসপিটালে রওয়ানা দিলো।

সবাই চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।হাহাকার আর শূন্যতায় ছেয়ে গেলো পুরো বাড়ি।

রাত বারোটা বাজে আমি বাড়ির দিকে রওয়ানা দিচ্ছিলাম।আর যাওয়ার পথেই দেখতে পেলাম একটা পাগলীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে কুলাঙ্গাররা।এত রাতে গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না তাই হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে হচ্ছে।কম পক্ষে চল্লিশ মিনিট হাঁটতে হবে তারপর গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।গ্রাম-গঞ্জের রাস্তায় এতো রাতে গাড়ি পাওয়াটা মুশকিল।কিছু দূর গিয়ে দেখলাম দুইটা ছেলে রাস্তার মধ্যে শুয়ে আছে পাশে একটা মহিলা রাতের ভোজন করছে - পরম তৃপ্তিতে ভোগ করছে মানুষের ফেলে রাখা উচ্ছিষ্ট খাবার গুলা।আর পাশে একটা কুকুর লেজ নাড়াচ্ছে।মহিলাটা নিজের পাত থেকে এক মুটো খাবার কুকুরকে ছুড়ে মারলো।তারপর ওরা ঘুমিয়ে পড়লো ল্যাম্পপোষ্টের নিচে পুরনো কাপড়ের স্তুপে।কুকুরটাও ওদের পাশে গিয়ে গা এলিয়ে দিলো।

নিরব রজনীর নিস্তব্ধতা ডিঙ্গিয়ে মাঝে মধ্যে শিয়ালের হুংকার ভেসে আসছে।চাঁদের আলোয় চারপাশ বেশ আলোকিত দেখাচ্ছে।রাতের বেলা প্রকৃতি নিরব থাকে যার দরুন হালকা শব্দটাও বড় হয়ে ধরা দেয়।ওপাশের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে স্বামী স্ত্রীর চাপা ঝগড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।স্ত্রী স্বামীকে প্রহার করে বলছেন-

—তুমি কি দিয়েছো?

—কী দিয়েছো আমাকে?

—বিয়ের পর থেকেই এ বাড়িতে চাকরানির মত বেঁচে আছি।রাতের বেলা ক্ষুধার্থ হায়নার মত টেনে টেনে কাপড় খুলে শরীর ভোগ করা ছাড়া কী দিচ্ছ আমাকে।বেচারা নিরব থেকে হয়তো দেনা পাওনার হিসাব খুঁজছে।

"স্বামী-স্ত্রী দুজনের ত্যাগেই গড়ে ওঠে একটা সুন্দর পরিবার।তারপরও দিন শেষে রয়ে যায় চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ।"

সামনে ছোট্ট একটা বাজার। ভাবলাম একটা সিগারেট কিনে নেই।বাকি পথটা না হয় সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে হাঁটলাম।সব দোকানি দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন।একটা বেঞ্চিতে জীর্নশীর্ণ একটা লোক বসে আছে।আমি সিগারেট ফোঁকে হাঁটতে লাগলাম।হঠাৎ দেখতে পেলাম ওই লোকটা মাছ বাজারের দিকে যাচ্ছে।মাছ বাজার পুরোটাই খালি।শুধু একজন বিক্রেতা দুটি মাছ নিয়ে বসে আছে।ওই লোকটা স্বল্প মূল্য দিয়ে অর্ধপচা মাছ দুটি ব্যাগে ঢুকালো।লোকটার মুখে হালকা একটা হাসি ফুটে উঠলো।অবশেষে স্ত্রী-সন্তানের পাতে এক টুকরো মাছ ঝুটাতে পারলেন- এটাই হতে পারে হাসির একমাত্র কারণ।তারপর লোকটা পাশের দোকান থেকে কয়েকটা চকলেট হাতে নিলেন।বাসায় যাওয়ার পর ছোট্ট বাচ্চাটা যখন ঘুম থেকে উঠে বলবে-

আমার জন্য কী এনেছো বাবা?

তখন হয়ত পরম মমতায় বুকে নিয়ে বলবেন-

এই তো বাবা তোমার জন্য চকলেট এনেছি।

আমি গলির ছোট রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।টিনের বেড়া দেওয়া ঘর থেকে রমিজ চাচার গলার আওয়াজ ভেসে আসছে-

রমিজ চাচা প্যারালাইসিস রোগি।তিন বছর আগে তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন।বেচারি বৃদ্ধা প্যারালাইসিস স্বামীর অনেক সেবা করেছে।স্ত্রীকে হারিয়ে বৃদ্ধা রমিজ চাচা একেবারে অসহায় হয়ে যান।তিনি আজ ও মাঝ রাতে মৃত স্ত্রী "ছমিরুনের"নাম ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন। আর বলতে থাকেন-"ছমিরুন",তুই কেন আমাকে বিছানায় ফেলে চলে গেলি।তুই কি জানতে না আমি জড় বস্তুর মতো।"আমি হাঁটতে পারি না, আমি বসতে পারি না"।আর মাঝে মধ্যে আজরাইলকে ও কটু কথা বলেন।চোখের জল ফেলে ক্ষীণ প্রতিবাদে বলে ওঠেন-

তুই কী আমাকে দেখলি না?

আজ এতোটা বছর ধরে আমি বিছানায় পড়ে আছি।তুই আমার ছমিরুনকে কেন নিলি?

মাঝে মধ্যে আজরাইল কে অন্ধ বলে গালি দেন-

হুঙ্কার ছেড়ে বলেন-তুই কী অন্ধ হয়েছিস।আমাকে দেখতে পাস না।আমাকে কেন এভাবে রেখেছিস?

রমিজ চাচার এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?

রমিজ চাচা তার মেয়ে কে ডাকছেন-

-"মা" রে-

-"মা'

-ও মা শুনতে পাচ্ছিস।

বড্ড পস্রাব পেয়েছে রে 'মা'

আমাকে ধরে যদি চেয়ারটায় বসিয়ে দিতে পারতি।

,

রমিজ চাচার গলার আওয়াজ কি ঘুমন্ত মেয়ের কানে সাড়া দিচ্ছে?

,

রমিজ চাচা আবার ডাকছেন-

কাঁদো কাঁদো গলায়-

ও মা তুই শুনতে পাচ্ছিস-

খুব কষ্ট হচ্ছেরে 'মা'

অবশেষে মেয়েটা ঘুম থেকে উঠলো-

একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল- এ সব কি শুরু করছো বাবা?বার বার পস্রাব করতে হয় নাকি?এই যেন শেষ বার হয়।আমি আর ঘুম থেকে উঠতে পারবো না।

একটা সময় আসে যখন সুঠাম দেহ আর যতেষ্ট শক্তি শরীরে থাকে না।বিশালদেহী শক্তিশালী মানুষ গুলা হয়ে যায় জড় পদার্থের মত।জড় পদার্থের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তিক্ততা চলে আসে প্রিয়জনের মনে।কারো কারো শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। কেউ বা দিন কাটায় প্রিয়জনের বুঝা হয়ে।অথচ এই মানুষটাই সারাজীবন প্রিয়জনের বুঝা বহন করেছে।

অদূরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।চাঁদনী রাতটাকে ভেতর থেকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।প্রকৃতির বুকে জ্যোৎস্নাবর্ষণ হচ্ছে।কেন এই জ্যোৎস্নাবর্ষণ?হতে পারে কলঙ্কিত পৃথিবীকে পাপ মুক্ত করার জন্য।প্রভাতের প্রথম সোনালি প্রভায় ধরণী নতুন এক রুপে আবির্ভাব হবে।জ্যোৎস্নাবর্ষণ আর শিশির কণায় স্নানকরা ধরণীকে দেখে মনেই হবে না -কত কলঙ্ক লুকিয়ে আছে এই ধরণীর বুকে।

"রাতের শিশির কণার সাথে মিশে যায় কত ব্যথিত মনের চোখের জল।নদীর খল খল শব্দ আর বাতাসের শা শা প্রবাহের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় কত ব্যথাতোর মনের ক্রন্দন।"

প্রকৃতির অপরুপ রুপের আড়ালে রয়ে যায় কত শত উপন্যাস।যা লেখকদের দৃষ্টিগোচর হয় না।একেকটা মানুষের জীবন একেকটা উপন্যাস।

যা সুখ,দুঃখ, হাসি,কান্না,সফলতা আর ব্যর্থতায় সমৃদ্ধ।প্রতিনিয়ত কত শত উপন্যাসের সূচনা হচ্ছে আর কত শত উপন্যাসের ইতি ঘটছে।

হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠলো-কল রিসিভ করলাম-

অপর পাশ থেকে কে যেন বলল-

"তুমার ফুফা আর বেচে নেই বাবা,হসপিটালে যাওয়ার আগেই গাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন"

Thanks for reading: একটি চাঁদনী রাত - A moonlit night, Sorry, my English is bad:)

Getting Info...

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.