চতুর্থ অধ্যায়ঃ দিবস রজনীর গল্প
জলপরীর আগমন
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ শেষ। বসন্তের বাতাসে খুশির আমেজ। আজ বাসন্তি পুজোর দশমী। গত কয়েকদিন ধরে মা বেশি খুশি, বাবাও বেশ খুশি, পরী বাড়ি আসছে। বুকের ভেতরে এক কোনে অভি নিজের খুশি দমন করে রেখেছে, ভেতরে খই ফুটলেও সেটা জাহির করার ক্ষমতা নেই। খুশিতে বুক ফেটে গেলেও জানানোর অধিকার নেই অভির। শেষ পর্যন্ত সেই দিন এসে গেল, পরী সবসময়ের জন্য ওর কাছে, ওর পাশে থাকবে।
গত সপ্তাহে ওর জন্মদিন ছিল, কিন্তু কোন চমক ছিল না যেটা অভি ভেবেছিল। হ্যাঁ অরুনা মাঝ রাতে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল আর দুপুরে পরী ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। কোন চমক না পাওয়াটাই যেন সব থেকে বড় চমক ছিল অভির জন্য।
কলেজ শেষ, এপ্রিলের পুরো মাস টাই ফাইনাল পরীক্ষার পড়ার জন্য ছুটি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। পড়াশুনা বেশ জোর কদমে চলছে। বাবা মা অফিসে বেড়িয়ে যাবার পরে, অরুনা আর পুবালি ওর বাড়িতে আসে পড়ার জন্য। একসাথে পড়ার মজা আলাদা, কিছুটা গল্প কিছু পড়া কিছু আড্ডা মারা। অরুনার অভির সাথে যে নিকট সম্পর্ক বাবা মায়ের তাতে কোন আপত্তি নেই কেননা অরুনার বাবা, ব্যানারজি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা মা এই ভ্রান্তি তে আছেন যে অরুনা, তালুকদার বাড়ির বউমা হয়ে আসছে। এই কথা অভি আর অরুনা দুজনেই ভাল ভাবে জানে এবং এখুনি সেই ভ্রান্তি ভাঙ্গার জন্য কেউই তৈরি নয়। অরুনা সমুদ্রনিলকে ভালবাসে আর অভি পরীকে। ওদের দুজনের বাড়ির কেউই জানে না সেই কথা।
মা স্কুলে বেড়িয়ে যাবার আগে অভিকে জানিয়ে যায় যে বিকেলে মায়ের সাথে পরী আসছে তাই অভি যেন বিকেল বেলা বাড়িতেই থাকে। অরুনার আর পুবালির সাথে যেন কোথাও বেড়িয়ে না যায়। না বললেও হত, অভি মনে মনে বলল। মা বেড়িয়ে যেতেই তিন জনে হেসে কুটপুটি।
অরুনা অভির দিকে চোখ টিপে বলে, “কিরে আজ শুচি দি আসছে, শেষমেশ কুত্তাটা তার কুত্তি পেয়েই গেল কি বল।”
অরুনা পরীকে শুচিদি বলে ডাকতো কেননা পরী অরুনার চেয়ে চার বছরের বড়। অরুনা প্রথমে বলেছিল যে অভির বউকে ও নাম ধরেই ডাকবে কিন্তু যেহেতু পরী ওর চেয়ে বড় তাই সন্মান বলে একটা কথা আছে আর সেই জন্য অরুনা শুচিদি বলে ডাকে।
অরুনা, “কি করবি আজ রাতে?”
অভি, “তোর কি মাথা খারাপ নাকি রে? এক ছাদের নিচে থেকে আমি কি খাল খুঁড়ে কুমির আনব? বাবা মা টের পেয়ে গেলে আমাদের দুজনকে আস্ত রাখবে না।”
অরুনা, “হুম সেটা বুঝলুম। আমাদের বাবা মাও যে ভ্রান্তিতে আছে সেটা এখুনি ভাঙ্গার দরকার নেই রে। আমিও বাবাকে বলতে ভয় পাচ্ছি সমুদ্রনিলের কথা, জানিনা বললে কি হবে।”
পুবালি যথারীতি চুপচাপ মেয়ে, ওদের কথা শুনে শুধু হাসি ছাড়া আর কিছু বিশেষ কথাবার্তা বলে না।
অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, “তোর নাকের ব্যাথা কি রকম আছে রে?”
পুবালি, “আছে ওই একরকম। তবে মাঝে মাঝে কপালের মাঝখান টা বেশ ব্যাথা করে।”
অরুনা ওর মাথায় টোকা মেরে হেসে বলে, “এই মেয়ে যতদিন না কারুর সাথে ঠিক করে মিশবে ততদিন ওর মাথার ব্যাথা সারবে না।”
আড্ডায় মেতে ওঠে অভি আর অরুনা, সেই দেখে পুবালি একটু রেগে যায়। পুবালি ওদের বলে, “তোরা যদি আড্ডা মারিস তাহলে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়।”
অরুনা নাক কুঁচকে বলে, “আরে বাবা একটু মজাও করতে দিবি না। দেখ আজ শুচিদি আসছে আর সেইজন্য ও কত খুশি।”
সেদিন আর পড়াশুনা হল না, সারাদিন ধরে আড্ডা মেরে টি.ভি দেখে কাটিয়ে দিল। অভি অরুনাকে থেকে যেতে বলেছিল যতক্ষণ না পরী আসে। অরুনা বলে যে পরীর সাথে এই রকম ভাবে দেখা করবে না, ও পরীর সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায়।
বিকেলে অরুনা আর পুবালি চলে যাবার পরে, অভি নিজে চা বানিয়ে টি.ভি র ঘরে বসে মা আর পরীর জন্য অপেক্ষা করে। কলিং বেল বাজতেই অভি দৌড়ে নিচে নেমে যায়। দরজা খুলে দেখে যে মা আর পরী দাঁড়িয়ে।
বুদ্ধিমতী পরী মায়ের সামনে মনের খুশি লুকিয়ে মাথা নিচু করে হেসে অভিকে অভিবাদন জানায়, “কেমন আছো অভিমুন্যু? পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে ত?”
মাথা নত করে অভিবাদন জানায় অভি, বুকের মধ্যে খুশির বান ডেকেছে, কিন্তু মায়ের সামনে ঠিক করে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, দুজনেই দুজনার মনের অবস্থা বুঝে নিয়ে মুখ টিপে হাসে। সিঁড়ি দিয়ে চড়ার সময়ে অভি পরীর দিকে তাকায়। পরীর প্রিয় পোশাক, শাড়ি, শাড়ি ছেড়ে পরী যেন আর কিছু পড়তে জানে না। আকাশী রঙের শাড়িতে পরীকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। সিঁড়ি চড়ার সময়ে অভি লক্ষ্য করল যে পরীর পায়ে রুপোর নুপুর, হাঁটার সময়ে মৃদু ছনছন আওয়াজ করছে আর সেই আওয়াজ যেন অভির বুকে এসে মাতিয়ে তুলছে। পরী মাঝে মাঝে পেছনে তাকায় আর মুখ টিপে হাসে, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে দেখে পাগলের মতন হয়ে যাচ্ছে, এত কাছ থেকেও যে পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা। মাঝে মাঝে অভির চোখ দেখে লজ্জা করছে কেননা অভি ওর চলন আর ওর কোমরের দোলা দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী লজ্জা টাকে কোনরকমে বুকের ভেতরে লুকিয়ে নেয়।
অভি ওর ব্যাগ আর সুটকেস পরীর ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়, পরী ওর পেছন পেছন ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। ঘরে ঢুকেই পরী হাত বাড়িয়ে অভিকে কাছে ডাকে। অভির মুখে হাসি যেন আর ধরে না। পরী প্রায় অভিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময়ে মা ডাক দেয়, “অভি শোন, দুধ আনতে একটু বাজার যা। পরী রাতে দুধ খাবে।”
অভি দাঁত দাঁত চিপে পরীর দিকে তাকায়, মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে যে, কি ভুল সময়ে মা ডাক দিলেন।
পরীর কানে কানে এসে বলে, “তোমার দুধের কি দরকার শুনি তোমার নিজের থাকতে…”
লজ্জায় পরীর কান নাক লাল হয়ে যায়। আলতো করে অভিকে এক থাপ্পর মেরে বলে, “একদম শয়তানি করবে না। ছোটো মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি বাজার যাও নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে ছোটমাকে বলে দেব যে তুমি আমাকে খেপাচ্ছো।”
অভি আরও খেপিয়ে তোলে পরীকে, “কি বলবে ছোটো মাকে?”
পরী যেন আরও রেগে যায় ওর কথা শুনে, “বের হও ঘর থেকে আমি জাপা কাপড় বদলাবো।”
অভি ওকে খেপাতে ছাড়ে না, “আমার জন্য তৈরি হয়ে থেক কিন্তু।”
শেষমেশ পরী থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে ওঠে, “ছোটো মা, অভি বাজার যাচ্ছে না আমাকে খেপাচ্ছে…”
অভির দিকে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে, বেশ হয়েছে, ঠিক হয়েছে।
মা ওদিকে চেঁচিয়ে অভিকে বললেন, “কি রে মেয়েটা এই এসেছে আর তুই ওর পেছনে লেগেছিস। তাড়াতাড়ি বাজার যা।”
অভি বাজারে বেড়িয়ে গেল, একরকম যেন হাওয়ায় উড়ছে অভি। বাজার থেকে দুধ কিনে একরকম দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফিরল।
বাড়িতে ঢুকে দেখে পরী জামা কাপড় বদলে নিয়েছে। অভি হাপাতে হাপাতে বাড়িতে ঢুকে মাকে দুধের প্যাকেট দিয়ে পরীর দিকে তাকায়। গায়ে একটা হালকা গোলাপি রঙের নাইট গাউন, ফর্সা ত্বকের সাথে বেশ মানিয়েছে। মা পরীর জন্য আগে থেকেই কিনে রেখেছিল। পরীকে বেশ তরতাজা দেখাচ্ছিল, রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে চা বানাচ্ছিল। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে পরীর রুপ সুধা পান করে অভি। একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে নেয় আর মনে মনে হাসে, কি সুন্দরী দেখাচ্ছে একবার নিরিবিলিতে পেলে হয়। পরী মাঝে মাঝে কাঁধের ওপর দিয়ে অভির দিকে তাকায় আর হাসে। বুঝতে কষ্ট হয় না যে নির্লজ্জের মতন অভি ওর যৌবন পান করছে। অভির চোখ দেখে নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে, মায়ের চোখ লুকিয়ে ঠোঁট কামড়ে সামলে নেয়।
মা অভির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? তোর ঘরে যা গিয়ে পড়াশুনা কর। কিছুদিন পরে পরীক্ষা আর তোর কোন হুঁশ জ্ঞান নেই নাকি। খাওয়ার সময়ে গল্প করা যাবে। চা হয়ে গেলে পরী তোকে দিয়ে আসবে খানে।”
মায়ের কথা শুনে অভি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পরে। পরী ওর মুখে দেখে বুঝতে পারে ওর মনের অবস্থা।
পরী, “তুমি পড়তে যাও আমি কিছু পরে চা দিয়ে আসব।”
অভি, “না আমার চা এখুনি চাই তারপরে আমি পড়তে যাব।”
মা বললেন, “ঠিক আছে বসার ঘরে গিয়ে বস চা দিচ্ছি।”
বসার ঘরে গিয়ে টি.ভি চালিয়ে বসল অভি, কিন্তু টি.ভির কিছুই ভাল লাগছে না। টি.ভি প্রোগ্রামের জায়গায় বারে বারে পরীর মুখ ভেসে আসছে। কিছু পরে পরী ওর জন্য চা নিয়ে বসার ঘরে ঢোকে। একটু ঝুঁকে চা দিতে গিয়ে অভির চোখের সামনে ওর বক্ষ বিভাজন অনাবৃত হয়ে পরে। অভির নির্লজ্জ দৃষ্টি পরীর বক্ষ বিভাজনে কেন্দ্রীভূত। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে মাথা নাড়ায়, কি নির্লজ্জের মতন তাকিয়ে আছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই চেঁচিয়ে ওঠে অভি, “চায়ে এক ফোঁটা চিনি হয় নি।”
মা ওদিকে রান্না ঘর থেকে বলেন যে চায়ে চিনি দিয়েছেন।
পরীও থেমে থাকে না, “একদম মিথ্যে কথা বলবে না, চায়ে আমি নিজে চিনি দিয়েছি।”
অভি পরীর দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “এক চুমুক দিয়ে দেখ বুঝতে পারবে কত চিনি দিয়েছ।”
পরী অভির মুখ দেখে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়। লাজুক হেসে অভির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি মাখিয়ে চায়ের কাপ অভিকে ধরিয়ে দিয়ে নিচু সুরে বলে, “এবারে চিনি হয়েছে। এখন পড়তে যাও।”
পরীর ঠোঁটের সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসি অভির হৃদয় তোলপাড় করে তোলে, এক অধভুত অনুভুতির পরশ মাখিয়ে চলে যায়। সামনে বই খোলা কিন্তু অভির পড়ায় মন নেই, খোলা বইয়ের পাতায় শুধু পরীর কাজল কালো চোখ আর ঠোঁটের দুষ্টু মিষ্টি হাসি ভেসে আসে। পায়ের নিচে মেঝে আর তার নিচেই পরী এই কথা চিন্তা করে যেন অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। চুলের এক গুচ্ছ বারে বারে পরীর বাঁ গালের ওপরে এসে চুমু খায় আর বাঁ হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরী সেই চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দেয় গালের ওপর থেকে, সেই মনোরম দৃশ্য বারে বারে অভির বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে আসে আর ওর পড়াশুনা শিখেয় ওঠে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে নিজের মতন করে জড়িয়ে ধরতে পারছে না, ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ বুকের মধ্যে নিতে পারছে না। প্রেমের এই ব্যাথা যেন অভিকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।
রাতে খাবার টেবিলেও বিশেষ কথা বার্তা হয় না, পরী ওর সামনে বসে তাও দুজনের মধ্যে অনেক দুরত্ত। দুজনের বুকের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ দোলা খায় কিন্তু ওদের এবার থেকে অনেক অনেক বেশি সাবধান হয়ে পা ফেলতে হবে। বাবা মা দুজনেই এক ভ্রান্তির মধ্যে আছেন যে অভি অরুনাকে ভালবাসে আর সেই ভ্রান্তি টাকে ঢাল বানিয়ে রাখতে হবে যতদিন না ঠিকঠাক ভাবে অভি নিজের পায়ে দাঁড়ায় আর তার কঠিন বাবা মায়ের সম্মুখিন হতে পারে।
রাতের খাওয়ার পরে অভি তিন তলায় নিজের ঘরে চলে যায়। এপ্রিল মাসে, কোলকাতায় একটু গরম পড়তে শুরু করেছে। শুতে যাবার আগে জামা কাপড় ছেড়ে শুধু একটা হাফ প্যান্ট পরে হাত মুখ ধুয়ে নিল। বিকেলে পড়া হয়নি, কিছু বাকি আছে সেটা ভাবছে রাতে শেষ করে নেবে। বই খুলে টেবিলে বসে পড়ল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার পরীর লাল ঠোঁটের মিষ্টি হাসি ওকে পাগল করে দিল।
বেশ কিছুক্ষণ পরে মাথার মধ্যে এক ঝিমুনি ভাব চলে আসে। বাইরে ঘন কালো রাত, আসে পাশের বেশির ভাগ বাড়ির আলো বন্ধ হয়ে গেছে। রাত সাড়ে বারোটা বাজে, জানালা দিয়ে বাইরের রাতের আকাশের দিকে তাকাল, আকাশে বাঁকা চাঁদ, ঠিক যেন পরীর হাসি। টিউব লাইট নিভিয়ে দিয়ে টেবিলে ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিল অভি। ল্যাম্পের মৃদু হলদে আলো যেন ঘরের মধ্যে এক স্বপ্নরাজ্য বানিয়ে তোলে।
এমন সময়ে পরী চুপিচুপি ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে অভির গলার দুপাস থেকে হাত বাড়িয়ে খালি বুকের ওপরে রাখে, আর সেই মিষ্টি পরশে অভির স্বপ্নের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যায়। নাকে ভেসে আসে পরীর গায়ের মিষ্টি গন্ধ, জুঁই ফুলের সুবাস। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে পরীর আঘ্রান বুকে টেনে নেয়, ঘাড়ের পেছনে পরীর নরম উষ্ণ বুকের স্পর্শে ধিরে ধিরে অভির শিরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভির মাথার ওপরে পরী মৃদু গাল ঘষতে শুরু করে। পরীর অনাবৃত উপরি বক্ষ অভির ঘাড়ে ঘষা খেয়ে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে যায় যেন। পরী অভির তপ্ত ত্বকের অনুভুতি বুকের ওপরে অনুভব করে মৃদু কেঁপে ওঠে। অভি পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে চুমু খায়। দু জনে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকে একে অপরকে। প্রেমের নিস্তব্ধতা বেশ মধুর মনে হয় ওদের।
মৃদুকনে পরী ওর কানে কানে বলে, “আই মিসড ইউ!”
ঘোরান চেয়ার ঘুরিয়ে পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে পরীকে কাছে টেনে নেয় অভি। কাঁধের ওপরে হাত রেখে মাথার চুল আঁকড়ে ধরে অভির মাথা নিজের নরম বুকের ওপরে চেপে ধরে। অভি ওকে আরও নিবিড় করে নিজের কাছে টেনে নেয়। পরীর গোল নরম পেট অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষে যায়, চিবুক চেপে ধরে কোমল বুকের খাঁজে। মাথা উঁচু করে অভি ওর গভীর আবেগ মাখানো চোখের দিকে তাকায়। সারা শরীরের শক্তি দিয়ে পিষে দেয় পরীর নরম শরীর, যেন পারলে পরীকে নিজের ভেতরে করে নেবে। ঠোঁটে লেগে থাকে এক অনির্বচনীয় মিষ্টি হাসি, আধ খোলা ঠোঁটের মাঝে মুক্ত বসান দাঁতের পাটি উঁকি মারে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে থাকে আর অভির তপ্ত হাতের পরশে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। সারা মুখে পরীর উষ্ণ নিস্বাসের ঢেউ খেলে বেড়ায়। নিস্বাসের ফলে, পরীর বুক আর পেট কেঁপে ওঠে আর অভির বুকের ওপরে যেন ঢেউ খেলে যায়।
অভি ফিসফিস করে পরীকে জানায়, “তুমি যখনই আমাকে এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরো তখনি আমি পাগল হয়ে যাই তোমার জন্য।”
পরী ফিসফিস করে উত্তর দেয়, “রতনে রতন চেনে আর শূয়রে চেনে কচু।”
বলেই হেসে ফেলে।
অভি, “মানে আমি স্বর্ণকার তাই ত?”
পরী, “না তুমি আমার ছোট্ট শূয়র ছানা।”
অভি, “আর তাঁর মানে তুমি একটা কচু।”
দুজনেই হেসে ফেলে। পরী চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে অভির চোখের চশমা পালটে গেছে।
পরী, “তোমার আগের চশমার কি হল? এটা দেখি নতুন।”
অভি দুষ্টুমি করে পরীর বুকে নাক ঘষে বলে, “তোমার জন্য ত আমার নতুন চশমা নিতে হল।”
পরী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমার জন্য? মানে, আমি কি করলাম?”
অভি, “বাঃ রে যেন তুমি কিছু জানো না। সেই রাতের ঘটনার পরে তুমি অরুনাকে ফোন করে সব বলে দিলে। আর সেইদিন কলেজে আমার চশমা গিয়ে পড়ল মেঝেতে।”
পরী উৎসুক হয়ে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কলেজে কি হয়েছিল?”
অভি, “সে অনেক কথা।”
পরী, “বল আমাকে তাহলে।”
অভি, “হুম, তুমি সকাল সকাল অরুনাকে ফোন করে সব জানিয়ে দিলে। আমি কলেজে পৌঁছলাম, দেখি অরুনা খুব চুপচাপ। একদম আমার সাথে কথা বলছে না, গম্ভির মুখ করে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। লাস্ট পিরিওড পর্যন্ত আমার সাথে কোন কথা বলল না, আমি খুব মর্মাহত হলাম ওর ব্যাবহার দেখে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আমি পুবালিকে জিজ্ঞেস করলাম যে অরুনার কি হয়েছে, কেন ও আমার সাথে কথা বলছে না। পুবালি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল ওর কাছে কোন খবর নেই, আমি চুপ। লাস্ট পিরিওড শেষ। পুবালি আমাকে চুপ করে বসে থাকতে বলল, আমিও চুপ করে বসে থাকি নিরুপায় হয়ে। অরুনা বারে বারে আমার দিকে কটমট করে তাকায় আর চোখ দেখে মনে হয় যেন এই আমাকে গিলে ফেলবে। ক্লাস থেকে সবাই বেড়িয়ে গেল, ক্লাসে শুধু আমরা তিন জন বসে। অরুনা আমার দিকে তাকাল, সিট ছেড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে।”
“পুবালিকে বলল ক্লাসের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে। পুবালি কিছু না বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, অরুনা চেঁচিয়ে ওকে দরজা বন্ধ করতে বলে। ওর গলায় ওই বাঘিনীর মতন আওয়াজ শুনে আমার ত হয়ে গেছে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমার সামনে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন দাঁড়িয়ে অরুনা, আমাকে কড়া গলায় বলল উঠে দাঁড়াতে। আমি নিরুপায় হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছু না বলেই আমার গালে সপাটে এক চড় কষিয়ে দিল অরুনা। চড় খেয়ে আমার গাল লাল হয়ে যায়, কান মাথা গরম হয়ে যায়। নাকের ওপর থেকে চশমা মাটিতে পরে কাচ ভেঙ্গে যায়। আমি গালে হাত বলাতে থাকি, গাল খুব জ্বালা করছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে অরুনা আমাকে অত জোরে চড় মারতে পারে।”
“রাগে ওর ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে, দুচোখ রাগে চিকচিক করতে শুরু করে। তারপরে আমার দিকে চেঁচিয়ে বলে, কি করে তুই ভুলে যাস শুচিদির কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলিস? শূয়র, কুকুর, তুই একটা নোংরা ছোটো লোক। তোকে আমি এতদিন ধরে অনুশুয়ার কাছ থেকে আগলে রাখলাম আর তুই কিনা শেষ পর্যন্ত দুই নিচ মেয়েছেলের কবলে গিয়ে পড়লি? তোর একবারের জন্যেও শুচিদির কথা মনে পড়লনা? তোর বুকের মধ্যে হৃদয় বলতে কিছু আছে না সেটাও নেই? শুধু মেয়েদের সাথে বিছানায় শুতে পারলে যেন তোর প্রানে শান্তি হয় তাই না? সব পুরুষ মানুষ এক তাই আমার ধারনা ছিল, কিন্তু তোকে দেখে একবারের জন্যেও মনে হয়েছিল যে আমি ভুল। কিন্তু তুই কুকুর আমার সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলি।”
“পুবালি কিছুই বুঝতে পারছিল না কি ঘটেছে। ও হতবাক হয়ে আমাদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। আমার মুখে কোন কথা নেই, আমি কি উত্তর দেব অরুনাকে, আমি পাপ করেছিলাম আর তার শাস্তি আমাকে পেতেই হত। অরুনা আমাকে বলল, তুই একবারের জন্যেও শুচিদির কথা ভাবিসনি, শুচিদির বুক ফেটে যেতে পারে সে কথাও তুই ভাবিসনি।”
“আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে, দু চোখ দিয়ে টসটস করে জল গরাচ্ছে আমার। আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে মা ধারিত্রিকে প্রার্থনা করে চলেছি যে মা ধারিত্রি দ্বিধা হও, আমাকে নিজের কোলে টেনে নাও। অরুনা আমার চিবুকে আঙ্গুল স্পর্শ করে আমার মাথা উঠিয়ে দেয়। আমার চোখের জল দেখে রাগ কিছুটা কমে যায় ওর। আমাকে চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতে বলে।”
“আমি জল ভরা চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকাই। আমাকে বলল, তুই একটা মস্ত বড় কুকুর, কিন্তু খুব ভাল কুকুর যে শেষ পর্যন্ত শুচিদির মান রেখেছে, আর সেই জন্যেই আমি তোর ওপরে রাগ করেও করে থাকতে পারলাম না রে। কুত্তা, তুই ত সব পয়সা ওই নিচ মেয়েছেলেদের পেছনে খরচ করে দিয়েছিস, আমি জানি তোর কাছে চশমা ঠিক করার মতন পয়সা নেই। আমার সাথে লালবাজার চল, ওখানে অনেক চশমার দোকান আছে।ওর কথা অমান্য করার সাধ্য আমার ছিল না আর আমার নতুন চশমা হল। বাড়িতে মা জিজ্ঞেস করলেন যে আমার চশমা কি হল, আমি জানালাম যে কলেজে পড়ে ভেঙ্গে গেছে তাই নতুন বানানো হয়েছে।”
পরী অভির সব কথা শুনে চুপ করে থাকে। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। কিছু পরে পরী বলল, “আমি অরুনার সাথে দেখা করতে চাই, কবে দেখা করাচ্ছ?”
অভি, “আরে বাবা, আজ সারাদিন অরুনা আর পুবালি আমার বাড়িতেই ছিল। আমি ওকে বলেছিলাম থেকে যেতে যাতে তোমার সাথে দেখা হয়, কিন্তু ও আমাকে বলল যে ও তোমার সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায় যাতে তোমাদের দেখা হওয়া স্মরণীয় হয়ে থাকে।”
পরী মৃদু মাথা নাড়াল, কানের সোনার দুল নড়ে উঠল আর মৃদু হলদে আলোয় ঝকমক করে উঠলো। পরী, “কি চিন্তা করছে অরুনা?”
অভি পরীর বুকে নাক ঘষে, “আমি কি করে জানব বলো।”
অভি ঠোঁট ছোটো গোল আকার করে গরম নিঃশ্বাস ছাড়ে পরীর বুকের খাঁজের ওপরে। উষ্ণ নিঃশ্বাস পরীর বুকে কম্পন জাগিয়ে তোলে, অভির শক্ত বাহু পাশে পরী কেঁপে ওঠে। ও মাথা নিচু করে অভির কপালে কপাল ঠেকিয়ে কপোত কুজনের সুরে বলে, “আমাকে কি দাঁড় করিয়েই রেখে দেবে?”
অভি ওকে আরও জোরে চেপে বলে, “না সোনা, আমি কেন তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখব। আমি তোমার এ বাড়ি তোমার, তুমি যেখানে খুশি বসতে পারো।”
পরী, “তুমি যদি আমাকে না ছাড়ো তাহলে আমি বিছানায় বসে তোমার সাথে গল্প করব কি করে?”
অভি, “বিছানায় কেন হানি, আমার কোলে বস।”
পরী ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বলে, “আর আমি যদি তোমার কোলে বসি তাহলে তুমি আমার কি করবে?”
অভি, “আমি কি করব, কিছুই করব না।”
পরী, “তুমি বলতে চাও যে তুমি কিছু করবে না আর আমি তোমাকে বিশ্বাস করে নেব?”
অভি, “হ্যাঁ বিশ্বাস করে নাও, যদি না চাও বিশ্বাস করতে তাহলেও আমার কিছু করার নেই।”
অভি ওর বাহুপাসের বাঁধন আলগা করে। পরী একটু সরে অভির কোলের ওপরে বসে পরে, দুপা ডান দিকে করে আর বাঁ হাতের ওপরে পিঠ দিয়ে। অভি বাঁ হাত ওর পিঠের ওপরে দিয়ে ওর ভার নেয় আর ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে। পরী ডান হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে থাকে আর বাঁ হাত দিয়ে ওর কাঁধে আলতো করে রেখে দিয়ে আরাম করে অভির কোলে বসে। অভির অনাবৃত জানুর ওপরে পরীর পাতলা কাপরে আচ্ছাদিত কোমল নিতম্ব, মৃদু চাপে দুজনেই যেন সাগরে ভেসে যায়। অভির বাঁ হাতের অবাধ্য আঙ্গুল পরী ডান বক্ষের কোমল ঢিবির ওপরে মৃদু মৃদু চাপ দেয়। পরী গভীর চোখে অভির দিকে তাকায়, মৃদু উত্তেজনায় নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে।
মাথ উঁচু করে মিষ্টি লাল ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে আসে অভি। পরী চোখ বন্ধ করে নিয়ে ঠোঁট খুলে অভির ঠোঁট জোড়ার ওপরে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। অভি ওর ওষ্ঠ ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষতে শুরু করে, পরী অভির অধর ঠোঁটের মাঝে নিয়ে মৃদু চাপ দেয়। ঠোঁটে ঠোঁটে আগুন জ্বলে ওঠে। অভির বাহুপাশ আরো দৃঢ় করে ধরে পরীর কোমর, পরীর কোমল বুক পিষে যায় অভির অনাবৃত বুকের ওপরে। প্রবল অনুরাগে দুজনের শরীর থেকে প্রেমের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়। বাঁ হাতে অভির কাঁধ চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া আর পিষে দেয় অভির ঠোঁটের ওপরে। মুখ অল্প খুলে অভির মুখের ভেতর থেকে হাওয়া চুষে নেয়। অভির মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়, আর অভি জিব ঢুকিয়ে দেয় পরীর ঠোঁটের ভেতরে। জিবের ডগা পরীর মাড়ির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। সেই অধভুত অনুভুতির স্পর্শে পরীর শরীর শক্ত হয়ে ওঠে। নিঃশ্বাস ধিরে ধিরে উত্তপ্ত হয়। বুকের মাঝে যেন হাপর টানছে কেউ।
অভি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে কোলের ওপরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরীর নরম বুক চেপটে যায় অভির নগ্ন বুকের ওপরে। অভির মনে হয় যেন কেউ ওর বুকের ওপরে তপ্ত মাখনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। অবাধ্য ডান হাতের আঙ্গুল পরীর উন্নত বুকের নিচে চেপে ধরে। পরী অনুভব করে অভির আঙ্গুল ওর বুকের ঠিক নিচে ধিরে ধিরে ওর বুকের কাছে এগিয়ে চলেছে। আসন্ন উত্তেজনায় ডান কাঁধের ওপরে নখ বসিয়ে দেয় পরী। চুম্বনে চুম্বনে প্রেমাবেগে উত্তপ্ত কপোত কপোতী যেন ঠোঁটের যুদ্ধে লিপ্ত হয়, কে কাকে বেশি ভাল করে চুমু খেতে পারে তার পরীক্ষা শুরু হয় যেন। কেউ কারুর ঠোঁট ছেড়ে দিতে নারাজ।
ঠোঁটের খেলা বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে পরী চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়, দুজনের বুকের মাঝে উত্তেজনায় শ্বাস ফুলে ওঠে। অভির কান প্রচণ্ড আবেগে লাল হয়ে যায়। প্রবল আকাঙ্খায় পরীর সারা শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরী আধবোজা চোখে অভির চোখের দিকে তাকায়।
কোনোক্রমে অভি শ্বাস নিতে নিতে ফিস ফিস করে বলে, “আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস করেছি, হানি।”
পরী মৃদুকনে উত্তর দেয়, “আমিও সোনা, তোমাকে অনেক মিস করেছি।”
অভি ওর মুখের ওপরে মৃদু উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “সোনা আমার ভেতরের আগুন টের পাচ্ছ কি?”
পরীর গালে প্রেমের লালিমা লেগে, মৃদু মাথা নাড়ায় পরী, হ্যাঁ, ও অভির উত্তপ্ত কঠিন আগুনের পরশ নিজের নিচে অনুভব করতে পারছে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মনের উচ্ছাস দমন করে নেয়।
ডান হাত পরীর হাতুর নিচে দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরীকে পাজাকোলা করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় অভি। পরী ওর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। অভি ওকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পরীর নরম আঙ্গুল অভির নগ্ন বুকের ওপরে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, আগুনের ফুল্কি নির্গত হয়ে আঙ্গুলের ছোঁয়ায়। দুজনের চোখ নিশ্চুপ হয়ে কথা বলে, একে ওপরের মনের অবস্থা জানিয়ে দেয়, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যেন এক প্রেমাবেগের সেতু বন্ধন তৈরি হয়।
অভি ওর কোমরের দুপাসে হাত রেখে ঝুঁকে পরে পরীর মুখের ওপরে, আরও একবার ওই লাল মিষ্টি ঠোঁটে চুমু দেবার জন্য। পরী দুষ্টুমি করে গড়িয়ে বিছানার আরেক পাশে চলে যায় আর পেটের ওপরে শুয়ে পরে বুকের ওপরে বালিস চেপে ধরে। সারা মুখের ওপরে চুল ছড়িয়ে পরে, মনে হয় যেন মেঘে চাঁদ ঢেকে গেছে। ওর মিষ্টি হাসি যেন অভিকে উত্তক্ত করে তোলে।
পরী, “আমি জানতাম যে তুমি আবার আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করবে।”
প্রেমচ্ছাসের ফলে শ্বাস বর্ধিত হয় পরীর, পিঠে ধিরে ধিরে ওঠা নামা করতে থাকে। অভি ওর দিকে তাকায়, উঁচু হয়ে ওঠা কাঁধ, বেকে নেমে আসে পাতলা কোমরে আর তারপরে বেকে ফুলে যায় পুরুষ্টু নিতম্বে ঠিক যেন সারা শরীর সাগরের এক মস্ত ঢেউ। অভি পরীর দিকে চার হাত পায়ে এগিয়ে যায়, পরী বাঁ হাতের আঙ্গুল মেলে ধরে অভির মুখের ওপরে আর ঠেলে দেয় অভিকে। অভি পরীর হাতের তালুতে ঠোঁট চেপে ধরে।
পরী ফিসফিস করে বলে, “অভি, হানি, আর আমাকে উত্তক্ত কোরো না, আমার আবেগ আর জাগিয়ে তুলো না, প্লিস।”
অভি বলে, “কেন বেবি? আমি যে বিগত তিন মাস ধরে অভুক্ত, আমার ভেতরে রক্ত টগবগ করে ফুটছে তাঁর সাথে তোমার রক্তও ফুঠছে। কেন দুরে সরে থাক, প্লিস কাছে এসে আমাকে বুকে টেনে নাও।”
পরী, “আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পেরেছি হানি, কিন্তু…”
অভি।, “কিন্তু কি… বেবি? তুমি আমাকে তিন মাস ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখলে আর আজ এতদিন পরে মিলিত হচ্ছি আর তুমি কিনা বলছ দুরে সরে থাকতে?”
অভি পরীর ওপরে শুয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। পরী ওর বুকের ওপরে হাত রেখে নিজেকে কিঞ্চিত বাঁচানোর চেষ্টা করে। অভির শক্তির কাছে না পেরে, অভিকে জড়িয়ে ধরে উলটে যায়। অভি নিচে আর পরী ওর বুকের ওপরে। অভি পরীর কোমর শক্ত করে ধরে থাকে, উত্তপ্ত শলাকা পরীর কাপরে ঢাকা তলপেটের নিচে ধাক্কা মারে। পরীর শরীর গরম হয়ে ওঠে অভির কঠিন শলাকার ধাক্কায়। দাতে দাঁত পিষে নিজেকে প্রানপন সামলে নেয় পরী। অভির বাহুপাস থেকে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে।
পাশে বসে অভির বুকে হাত রেখে বলে, “অভি, আমাকে পেতে হলে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তোমার পড়াশুনায় ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না। আমি তোমার পড়াশুনা বাধা হতে আসিনি সোনা। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক তাঁর পরে তোমার সব স্বপ্ন আমি পূরণ করে দেব।”
হেরে যায় অভি, মৃদু মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “মেনকা বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ করেছিল, আর আমি ত এক ছোটো মানুষ মাত্র, আমি কি করে নিজেকে ঠিক রাখবো।”
পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে নাকে নাক ঘষে বলে, “অভি আজ থেকে আমি আর মেনকা নয়, আমি তোমার মা ধরিত্রি।”
আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মাথার নিচে বালিস টেনে অভিকে চোখ বন্ধ করতে আদেশ দেয়। অগত্যা অভি চোখ বন্ধ করে নেয়, পরী ওর চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়।
অপ্সরা দেবাঙ্গনার সমাবেশ
অভির সীমানার মধ্যে পরীর পদক্ষেপ অভিকে উমত্ত করে তোলে। পরীর ঠোঁটের মিষ্টি হাসি, চোখের চোরা চাহনি, কোমর দুলিয়ে চলন, মধুর সুরে কথন, সব যেন কেমন স্বপ্ন বলে মনে হয় অভির। কিন্তু শক্ত পরী, নিজেকে অভির দুষ্টু হাতের নাগালের বাইরে রখতে সক্ষম হয়। প্রথম প্রথম পড়াশুনায় মন বসে না, কিন্তু পরীর কড়া শাসনের সামনে শেষ পর্যন্ত অভিকে মাথা নত করতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বা একটু নরম আঙ্গুলের স্পর্শ অভির গালে। দৃঢ়সঙ্কলপ পরী, যতদিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততদিন নিজেকে ওর হাতের নাগালের বাইরে রাখবে।
দিন কয়েক পরে, এক সকালে অরুনা অভির বাড়িতে ফোন করে। অভি বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল, আর মা স্কুল যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। পরী ফোন ধরে, অভি কান পেতে ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করে কিন্তু শুধু হাসি আর ফিসফিস ছাড়া কিছুই কানে গেল না। মা বেড়িয়ে যাবার আগে পরীকে বাড়ির কি কি করতে হবে সব নির্দেশ দিয়ে গেল আর বলে গেল অভি যেন নিজের ঘর থেকে না বের হয়।
মা বেড়িয়ে যাবার পরে অভি নিজের ঘরে যাবার জন্য পা বাড়াল। পরী সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পুজো দেওয়া হয়ে গেছে। পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে ঢুকল পরী, ঘর যেন ওর গায়ের রঙ্গে একটু আলোকিত হয়ে উঠল। সারা চেহারায় এক বিশুদ্ধতার আলোক ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। পরনে লাল পাড় হাল্কা হলুদ রঙের শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরা গায়ে ছোটো হাতার লাল কাঁচুলি, পরীর সৌন্দর্য যেন শত গুন বর্ধিত করে তুলছে। মাথার চুল হাত খোঁপায় ঘাড়ের ওপরে বাঁধা, সদ্য স্নাত তাই ভিজে চুলের ডগা থেকে কিছু জল ওর শাড়ির পিঠের কিছু অংশ ভিজিয়ে দিয়েছে। সামনে যেন এক দেবী প্রতিমা দাঁড়িয়ে। হাতে কয়েক গাছা সোনার চুরি, হাত নাড়ার সময়ে টুং টাং করে বেজে ওঠে।
পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “অরুন্ধুতি ফোন করেছিল।”
অভি, “হ্যাঁ তা জানি। তুমি যে রকম ভাবে কথা বলছিলে তাতে অন্য পাশে অরুনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।”
পরী, “আমার সাথে আজ দেখা করতে চায়।”
অভি, “কোথায়?”
পরী, “আমাকে শুধু বলল যে নাগেরবাজারে যেন আমরা ওদের জন্য অপেক্ষা করি।”
অভি, “দাড়াও আমি ওকে কল করে জেনে নেই কোথায় নিয়ে যেতে চায়।”
পরী, “না তুমি ওকে কল করবে না, ও তোমাকে বলতে বলেছে যে আমাকে নিয়ে নাগেরবাজার যেতে, ব্যাস।”
অভি, “ওকি তোমাকে জানিয়েছে যে আমরা তারপরে কোথায় যাচ্ছি?”
পরী খিলখিল করে হেসে ফেলে, “কেন নিজের এত সুন্দরী বান্ধবীর ওপরে এতটুকু বিশ্বাস নেই তোমার?” পরী তখনো পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে, অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অভি, “তুমি পর্দার পেছনে কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছ, বেড়িয়ে এস পুরটা।”
পরী, “আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি, যে তোমার সামনে বেড়িয়ে আসব। তুমি কখন কি করে বস তার কোন ঠিক আছে নাকি।”
অভি কপাল চাপড়ে বলে, “যাঃ বাব, একদম বদমাশ মেয়ে তুমি।” কিন্তু অভি উঠে দাঁড়ায়, এবারে সত্যি পরীর দিকে এগোনোর জন্য।
পরী দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দরজার ফাঁক দিয়ে অভির দিকে দেখতে থাকে।
পরী, “তুমি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে আস তাড়াতাড়ি। অরুনা বলেছে দশটা নাগাদ ও নাগেরবাজারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। আমি চাই না তোমার জন্য আমাদের দেরি হোক।”
অভি জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি পড়বে।”
পরী উত্তর দিল, “কেন, সবসময়ে যা পরি তাই পড়ব, শাড়ি।”
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেড়িয়ে এল অভি। পরী শাড়ি পড়বে তাই ওকে তার সাথে সামঞ্জন্স্য রেখে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে নিল না হলে ঠিক ভালো দেখাবে না। প্রেয়সীর চলন বলন আর পোশাকের রুচিশীলতায় কেউ বলতে পারবে না যে পরী গ্রাম থেকে আসা এক মেয়ে। পরীর পরনে সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি, আঁচলে ছোটো ছোটো ফুল আঁকা। শাড়ির সাথে মিলিয়ে সবুজ রঙের ছোটো হাতার গায়ের কাঁচুলি। চেহারায় প্রসাধনির চিহ্ন নেই তা সত্তেও গোলাপি ঠোঁটে জোড়া বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে আর গালে গোলাপি লালিমা মাখা। কপালে দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে একটা ছোট্ট সবুজ রঙের টিপ, চোখের কোলে কাজল। গলায় একটা সরু সোনার হার ঠিক উপরি গলার নিচ পর্যন্ত নেমেছে। ডান দিকের এক চুলের গুচ্ছ গালের ওপরে দোল খায়। পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে অভি, যেন লক্ষ্মী প্রতিমা।
এই বিশুদ্ধতার প্রতিমার রুপ চোখ দিয়ে দেখার। অভি ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর মুখ আঁজলা করে হাতে ধরে মুখে নিজের দিকে তুলে ওর গভীর চোখের দিকে তাকায়। ছোট্ট করে কপালে একটা চুমু খায় অভি, প্রেমের আবেগে নয়, সস্নেহের চুম্বন এঁকে দেয়।
পরী লাজুক হেসে বলে, “আমরা কি যেতে পারি?”
অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ মা ধরিত্রি, সর্বদা আপনার পেছন পেছন আছি।”
অরুনার কথা মতন অভি আর পরী ট্যাক্সি করে নাগেরবাজার পৌঁছে যায়। ওদের জন্য যেন আরও এক চমক অপেক্ষা করে ছিল।
গত তিন বছরে প্রথম বার অভি অরুনাকে শাড়ি পড়তে দেখে। অরুনার পরনে হাল্কা সবুজ রঙের শাড়ি। নাকে সোনার ফ্রেমের চশমা, মুখে কোনদিনই প্রসাধনী করে না, তাই সেদিনও ছিল না বিশেষ। অভি একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওর সেই দেবী প্রতিমা দেখতে থাকে। অভি পরীর দিকে তাকায় অরুনা কে দেখে। পরীকে দেখে অরুনা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। এঁকে অপরকে এর আগে কোনদিন দেখেনি তাও কেন জানিনা মনে হল অভির যে দুজন যেন দুজনকে আগে থেকেই চিনত। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ছোট্ট চুমু খায়। অভি কিছু দুরে দাঁড়িয়ে দেখে ওর জীবনের দুই দেবী সমান প্রতিমা, একজন অভির চোখের মণি আরেক জন ওর হৃদয়। পুবালি চুপ করে দাঁড়িয়ে ওদের দেখে আর মিটিমিটি হাসে। অভি পুবালিকে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অরুনা, পুবালি মাথা নাড়িয়ে হেসে অরুনাকে দেখিয়ে বলে যে সেটা একটা চমক।
অরুনা পরীকে দেখে হেসে বলে, “শুচিদি আমি অভিকে ঈর্ষা করতে ইচ্ছে করছে গো। আমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম তাহলে নিশ্চয় তোমার প্রেমে পড়তাম।”
পরী একটু লাজুক হেসে আদর করে ছোট্ট একটা চাঁটি মারে অরুনার গালে। অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে। অরুনা উত্তর দেয় যে দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির।
অভি অবাক হয়ে যায়, “কি? শেষ মেশ দক্ষিণেশ্বর? না।”
অরুনা, “তুই যেতে না চাইলে যাস না, কিন্তু আমরা মেয়েরা অখানেই যাবো।” এই বলে পরীর হাত ধরে হাটা দিল।
অগত্যা অভি, পুবালির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ওদের পেছন পেছন চলতে শুরু করল।
ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে মেয়েরা পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিল। পুবালি যথারীতি চুপ মাঝে মধ্যে একটু আধটু কথা বলছে, আর অভি অগত্যা চুপ, ওকে কেউ কথা বলতে দিলে ত বলবে।
অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা শুচিদি, তুমি এই পাগলটার প্রেমে পড়লে কি করে?”
পরী আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে উত্তর দেয়, “ব্যাস যেন হয়ে গেল, যেদিন প্রথম এক দুজনকে দেখেছিলাম সেদিন কেন জানিনা মনে হয়েছিল যে ও শুধু আমার জন্যে এই পৃথিবীতে এসেছে।”
অভি চুপ করে সামনের শিতে বসে ওদের কথা শুনে যায়, পেছন থেকে পরী ওর মাথার পেছনে এক ছোট্ট চাঁটি মারে।
অরুনা খিলখিল করে হেসে বলে, “উম, কি রোম্যান্টিক ব্যাপার। ও পাগলের অনেক সাহস যে তোমাকে নিয়ে একা একা ওই দুর্গম পাহারে ঘুরতে গেছে, বাপরে ভাবলেই যেন গায়ে কাঁটা দেয় আমার। কেউ ত ভাবতেই পারেনা একা একা যাবার কথা, তায় আবার এমন এক জায়গায় যেখান কার নাম আমি আগে ত শুনিনি। তুমি ওই পাগলের সাথে গেলে কি করে?”
পরী হেসে অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কেন সমুদ্রনীল তোকে কোথাও নিয়ে যায় না?”
অরুনা একটু ম্লান হেসে উত্তর দিল, “না গো শুচিদি, ও পুবালির মতন একটু মুখচোরা স্বভাবের, অভিমন্যুর মতন পাগল বা দুঃসাহসী ছেলে নয়। এ পাগলা ত যেখানে সেখানে ভিড়ে যায়। তুমি ওকে সামলাও কি করে?”
পরী কিছু উত্তর দেয় না, শুধু একটু হাসে অরুনার দিকে তাকিয়ে।
অরুনা, “জানো, যখন কলেজে এসেছিল, তখন যেন পাথরের মূর্তি ছিল। আমরা সবাই ওকে একটু এড়িয়ে চলতাম কেননা খুব গম্ভির ছিল আর আমরা সবাই ওকে নাক উঁচু বলে ভাবতাম। যেদিন আমার বোনকে বাঁচাল সেদিন আসল বিহারী বেড়িয়ে পড়ল ওই গম্ভির মুখোশের পেছন থেকে।”
পরী হেসে অরুনাকে বলে, “তোর মুখে ওই পাগলটার জন্য এত প্রশংসা কেন রে? ওর কথা ছাড় সমুদ্রনীলের কথা বল।”
ওদের কিচিরমিচির চলতে থাকে অনবরত। দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে দেখে যে সেদিন মন্দির বেশ খালি। সপ্তাহের মাঝে এসেছে বলে মন্দির প্রাঙ্গনে ভিড় বিশেষ নেই। অভি ভাবল পুজোটা তাহলে একটু ভালো করেই দেওয়া যাবে। পুজো শেষে ওরা সবাই আবার গল্পে মেতে ওঠে।
অভি ওদেরকে পেছন থেকে দেখে, একজন ওর ভালবাসা আরেক জন ওর বান্ধবী। অভি আর পুবালি ওদের পেছন পেছন হাঁটছিল। অভি পুবালিকে ওর নাকের ব্যাথার কথা জিজ্ঞেস করে।
পুবালি অভির মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে, “মাঝে মাঝে জানিস খুব ব্যাথা করে, মাথাটা যেন খুব ভার হয়ে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমি মরে যাব।”
অভি, “ডাক্তার কি বলছে।”
এর মাঝে অরুনা ওদের দিকে পেছন ফিরে তাকায়, অভি ওকে দেখে একটু হাসে।
পুবালি, “ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা দিতে বারন করেছে, বলেছে মাথায় যেন কোন রকমের চাপ না নেই। একটা এম.আর.আই স্কান করাতেও বলেছে, আমার কিছু যেন মনে হচ্ছে।”
অভি চমকে ওঠে, “এত সব কবে ঘটে গেল? একবারের জন্য আমাকে জানাসনি ত?”
পুবালি, “দুদিন আগে আমি বাথরুমে পরে যাই আর নাক থেকে আবার রক্ত বের হতে শুরু করে।”
অভি, “আমাকে জানাসনি কেন?”
পুবালি, “তোকে কেন আবার জ্বালাতন করা, বাড়িতেই ত ছিলাম সবাই কাছে ছিল তাই আর তোকে জানান হয় নি।”
অভির বুকে থেকে এক দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে পরে। পুবালি মাথা নিচু করে মন্দির প্রাঙ্গনের লাল মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভি লক্ষ্য করে যে পুবালির নাকের ওপরে একফোঁটা চোখের জল। অভি চমকে যায় পুবালির চোখে জল দেখে। অভি একবার পরী আর অরুনার দিকে তাকায়, দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এগিয়ে গেছে, দুজনেই গল্পে মশগুল।
পুবালি কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “আমাকে একটা কথা দিবি? অরুনাকে বলিস না যেন।”
অভি ওর কাঁধে হাত রাখে, “তোর কি হয়েছে?”
পুবালির গলার আওয়াজ শুনে বুকের ভেতর ককিয়ে এক অজানা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় অভির।
পুবালি অভির দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলে, “ডাক্তার জানিয়েছে যে আমার নাকের আর চোখের শিরা গুলো যে গুলো মাথার সামনের দিকের সাথে কানেক্টেড সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়।”
ঠোঁট কেঁপে ওঠে পুবালির, “আমার হাতে খুব কম সময়, অভি। আমার কিছু হয়ে গেলে, সমুদ্রনীলকে বলিস অরুনাকে দেখার জন্য।”
পুবালির কথা শুনে মনে হল যেন একটা বিশাল ঢেউ অভির বুকের ওপরে আছড়ে পড়ল আর তছনছ করে দিল ওকে। পরী আর অরুনার দিকে তাকাল অভি, ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছে। অভি নিরুপায় হয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে, ভাগ্য বিধাতার একি পরিহাস। দুহাতে পুবালিকে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন ওর সব ব্যাথা বেদনা যদি নিতে পারত তাহলে নিয়ে নিত নিজের বুকে। পুবালি পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওর বুকের ওপর মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে।
অভির সম্বিৎ ফেরে যখন অরুনা ওর পিঠের ওপরে আলতো করে এক চাঁটি মারে।
পরী অভির জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি হয়েছে তোমার?”
অভি পুবালিকে কথা দিয়েছে অরুনাকে বলা বারন তাই কথা ঘুরিয়ে বলল, “ও কিছু না, পুবালি সেই প্রথম দিনের কথা মনে করে একটু ইমোসানাল হয়ে পড়েছিল এই যা।”
অরুনা কিছুই বুঝতে পারল না ওদের মনের ব্যাথা, পুবালিকে হেসে বলল, “এই পাগলি, ওই কথা চিন্তা করে তোরা ইমোসানাল হয়ে পড়লি?”
অরুনা অভির দিকে তাকাল কিন্তু ওর মনের মধ্যের যে ঝড় বইছে সেটা অনুধাবন করতে পারল না। পরী অভির চোখে ঝরের পূর্বাভাস দেখে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ওই চোখের আড়ালে যেন অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে অভি। পরী চোখের ইশারায় ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি চোখ টিপে পরীকে চুপ করে যেতে ইশারা করে।
অরুনা, “ওই বারো শিবের মন্দিরের এক কোনায় একটা গাছ আছে। লোকেরা বলে ওখানে গিয়ে যদি সুত বাঁধে তাহলে নাকি মনস্কামনা পূরণ হয়। চল না আমরাও গিয়ে আমাদের মনের কথা চেয়ে ওখানে সুত বাধি?”
পরী অরুনার কোথায় হেসে ফেল আর ওরা সবাই মিলে যায় ওই গাছের দিকে। জীবনে প্রথম বার অভির যেন এক ভিখারির মতন নিজেকে মনে হল, ভগবানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে অভি নিজের জন্য কিছু চাইবে।
অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অভি মনে মনে চাইল, “আমি অরুন্ধুতি আর পুবালিকে আমার আর শুচিস্মিতার বিয়ের সময়ে সবার মাঝে যেন হেসে খেলে বেড়াতে দেখতে পারি।” অভি জানেনা ভগবান ওর মনের কথা শুনলেন কিনা, কিন্তু অভি প্রানপন চাইল যাতে ওর সেই ইচ্ছে পূরণ হোক।
অশ্রুহীন বিদায়
বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। বিগত দুমাস ধরে প্রেয়সী পরী যেন মা ধরিত্রির রুপ ধারন করেছিল। সর্বদা চোখে চোখে রেখেছিল অভিকে। ওকে নিজের ঘর ছেড়ে রাতের বেলায় বসার ঘরে পড়তে বসতে নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে চোখে চোখে রাখতে পারে। সেই কয়দিন পরী নিজেকে এক নিয়ন্ত্রিত মহিলা বানিয়ে তুলেছিল ঠিক তাঁর ছোটমায়ের মতন। অনেক রাত কেটে গেছে যে অভি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ত আর পরী ওর মাথার নিচ থেকে বই নিয়ে গুছিয়ে রেখে দিত আর গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে দিত। অনেক রাত কেটে গেছে, পরী ওর সামনে বসে এক নয় খবরের কাগজ পড়ত না হলে কোন উপন্যাস নিয়ে বসে থাকত। যাতে অভির ঘুম না পায় সেই জন্য সময়ে সময়ে কফি বানিয়ে আনত। কফি খাইয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিত, কিন্তু একবারের জন্যেও গায়ে হাত লাগাতে দিত না। অভি মাঝে মাঝেই বকা খেত অপটিক্সের বা মেকানিক্সের জন্য। মা প্রথম কয়েকদিন ওদের ওপরে একটু নজর রেখেছিলেন, মনে হয় মা কিছু আচ করেছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে পরী শুধু সামনে বসে উপন্যাস পরে আর টেবিলে কফির সরঞ্জাম তখন মায়ের সন্দেহ দূর হয়ে যায়। পরীর আর অভির ভেতরের কথা মা টের পায়না।
পরী সেই প্রথম রাতের চুম্বনের পরে নিজের চারদিকে এক উঁচু দেয়াল গড়ে তোলে, অভির সাধ্য ছিলনা সেই কঠিন দেয়াল টপকে প্রেয়সী পরীর কাছে পৌঁছানর, সামনে সবসময়ে যেন মাতৃময়ি মূর্তি শুচিস্মিতা দাঁড়িয়ে থাকত। পরী একেবারে বঞ্চিত করেনি অভিকে, মাঝে মাঝে সস্নেহে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিত কিম্বা ঘুম ঘুম পেলে মাথায় চাঁটি মেরে জাগিয়ে দিত কিম্বা রাতে ঘুম না আসলে মাথার চুলে বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিত। অভির বুঝতে কষ্ট হয়না যে ওকে অনেক কিছু করতে হবে জীবনে যদি পরীকে নিজের করে নিতে হয়। এই পৃথিবী টাকা চেনে আর চেনে সামাজিক পদমর্যাদা, এই দুটি না পেলে অভি পরীকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না ওর কঠোর বাবা মায়ের শৃঙ্খলা থেকে। শেষ পর্যন্ত মা ধারিত্রি জয় লাভ করেন মেনকার কাছে।
দিনটা, 22শে মে, 2001. বাড়ির সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। অভি বসার ঘরে বসে টি.ভি. তে ওর প্রিয় সিনেমা “Gone with the wind” দেখছে। বাড়ির কারুর ইংরাজি সিনেমা বিশেষ পছন্দ নয় তাই অভি একা একা বসে সিনেমা দেখছিল। গ্রীষ্মকাল কোলকাতায় চেপচেপে গরম, মাথার ওপরের পাখা বনবন করে ঘুরছে। পরী মায়ের সাথে রান্না ঘরে কিছু কাজে ব্যাস্ত আর বাবা রাতের শোয়ার জন্য বিছানা তৈরি করছিলেন।
রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, তখন ফোন এল। বাবা ফোন তুলে কথা বললেন। কিছু পরে ফোন রেখে বাবা বসার ঘরে ঢুকলেন। বাবার থমথমে মুখ দেখে অভির বুকের মাঝে এক সংশয়ের উদ্রেক হয়। অভি বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে কার ফোন এসেছিল।
বাবা, “ব্যানারজি কাকু তোকে এখুনি বেলে ভিউ ক্লিনিকে ডেকেছে।”
ব্যানারজি কাকু মানে অরুনার বাবার ফোন, সেই শুনে অভির আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। এক পলকের মধ্যে পুবালির কান্না ভেজা চোখের কথা মনে পরে গেল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে উঠল অভি। পরী আর মা বাবার কথা শুনে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসে বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে। পরী অভির দিকে তাকাল, অভির চোখ দেখে পরীর বুঝতে বাকি রইল না যে ঘটনা কি ঘটে গেছে।
কোনোরকমে জামা কাপড় পরে অভি বেড়িয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, এমন সময়ে বাবা অভিকে ডাক দিয়ে বললেন যে পরীও যেতে চায়। অভি মায়ের দিকে তাকাল, পরী জামাকাপড় পরে তৈরি যাবার জন্য। ও ওর ছোটমায়ের দিকে জল ভরা করুন চোখে তাকিয়ে অনুরধ করে অভির সাথে যাবার জন্য। মা পরীর চোখ দেখে বুঝলেন যে পরীকে আটকানো সম্ভব হবে না।
ট্যাক্সিতে পরীর কে জড়িয়ে ধরে থাকে অভি, পরীর অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না যে একটা বিশাল বড় ঝড় আকাশের কোনায় জমে এসেছে। রাত প্রায় সাড়ে এগারটা নাগাদ ওরা নারসিং হোমে পৌঁছায়। ভেতরে ঢুকে দেখে ব্যানারজি কাকু, কাকিমা, পুবালির বাবা মা আর অরুনা দাঁড়িয়ে। পরীকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে অরুনা। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
অভি ব্যানারজি কাকুর কাছে গিয়ে পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, বিকেল বেলা সবাই চা খেতে ব্যাস্ত ছিল। পুবালি নিজের ঘরে নিজের আলমারি গুছাতে ব্যাস্ত ছিল। আল্মারির মাথায় কোন জিনিস ছিল যার জন্য ও একটা টুলের ওপরে দাঁড়িয়ে সেটা নামাতে চেষ্টা করছিল। কোথা থেকে একটা মাকরসা দেখে পুবালি আঁতকে ওঠে আর টুল থেকে পরে যায়। আলমারির হাতল মাথায় লাগে আর নাক থেকে রক্ত বের হতে শুর হয়। প্রথমে পাশের ডাক্তার ডেকে রক্ত থামানর ব্যাবস্থা করে, কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। ডাক্তার রক্তের সাথে পুঁজ বের হতে দেখে পুবালিকে নারসিং হোমে ভরতি করতে বলেন। নারসিং হোমে নিয়ে আসা হয় পুবালিকে আর সঙ্গে সঙ্গে অপারেশান শুরু করে দেওয়া হয়।
অভি বাড়িতে ফোন করে বাবা মাকে সব জানায়। বাবা খুব চিন্তিত কেননা ব্যানারজি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা পরীকে আর অরুনাকে দেখার জন্য বলেন। অভি লক্ষ্য করে যে অয়েটিং হলের এক কোনায় সমুদ্রনীল দাঁড়িয়ে। অরুনার বাবা মা জানেন না সমুদ্রনীলের ব্যাপার তাই সমুদ্রনীল ওদের সামনে আসতে পারছিল না আর অরুনার সাথে দেখা করতে পারছিল না। অভি ধিরে ধিরে সমুদ্রনীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে ও ব্যাপার টা জানল কি করে। সমুদ্রনীল জানায় যে অরুনা ওকে ফোন করে জানিয়েছে, কিন্তু এখানে এসে বাড়ির সবাইকে দেখে ও আর অরুনার কাছে যেতে পারছে না।
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে অরুনাকে নিয়ে আসতে বলে। অরুনা অনেক আগেই সমুদ্রনীলকে লক্ষ্য করেছিল কিন্তু বাবা মায়ের জন্য কাছে যেতে পারেনি। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের কাছে আসে। অরুনা সমুদ্রনীল কে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পরে।
পরী অভিকে বলে, “এখান থেকে চলে এস, ওদের কে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দাও।”
অভি উত্তর দেয়, “তুই অরুনাকে একা ছেড়ে যেওনা, সেটা ঠিক হবে না। এখানে কেউ সমুদ্রনীলের কোথা এখনো জানেনা তাই ওকে একা ছেড়ে গেলে হিতে বিপরিত হতে দেরি হবে না। তুমি ওদের কাছেই থাক আমি যাই কাকুর কাছে।”
প্রত্যকে মুহূর্ত যেন এক এক বছর মনে হচ্ছিল অভির, সময় যেন আর কাটতে চায় না। উৎকণ্ঠায় সবাই দাঁড়িয়ে। পুবালির বাবা মা খুব চিন্তিত, তাদের একমাত্র মেয়ে আজ অপারেশান টেবিলে শুয়ে, প্রহর গুনছে।
সমুদ্রনীল কিছু পরে অভিকে ডেকে বলল যে ও সারা রাত হস্পিটালে থাকতে পারবে না কারন কেউ ওকে দেখে ফেললে অরুনা মুশকিলে পরে যেতে পারে। অভির সেই কথা ঠিক বলে মনে হল, অভি জানাল যে কিছু খবর থাকলে সমুদ্রনীল কে জানিয়ে দেবে। পরী অরুনার পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করে।
ধরা গলায় পরী অরুনাকে সান্তনা দেয়, “আরে তুই এত কাঁদছিস কেন, পুবালির কিছু হবে না, চিন্তা নেই। শুধু নাক থেকে রক্ত পড়ছে সেটা অপারেশান করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
অভি মনে মনে ভগবান কে ডেকে ওর মনের কথা জানায়, জানেনা ভগবান ওর কথা শুনলেন কিনা তাও শেষ বারের মতন হাত জোর করে প্রার্থনা জানায় তাঁর কাছে। ব্যানারজি কাকু সবাইকে এক বার জিজ্ঞেস করলেন যে কেউ চা খাবে কি না, কেউই অপারেশান থিয়েটারের সামনে থেকে নড়তে নারাজ। অভি পুবালির মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু ওর মা জানালেন যে মেয়ের যতক্ষণ না কোন খবর আসছে ততক্ষণ তিনি নড়বেন না।
প্রায় সকাল চারটের সময়ে ডাক্তার বেড়িয়ে এল অপারেসান থিয়েটার থেকে। সবাই উন্মুখ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে, কি খব্র দেন ডাক্তার। অরুনা চোখ বন্ধ করে পরীর হাত শক্ত মুঠির মধ্যে ধরে বসে থাকে।
ডাক্তার জানালেন, “ব্রেনের সামনের দিকের ভেইন্স গুলো খতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ঠিক করার জন্য কিন্তু এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। পুবালি ধিরে ধরে কোমায় চলে যাচ্ছে। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। পরের বাহাত্তর ঘন্টা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কিছু পরে ওকে আই.সি.ইউ তে নিয়ে যাব।”
পরীর দিকে তাকাল অভি, পরীর চোখে জল, অরুনা পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন পরী ওর শেষ সম্বল। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে অরুনার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পরী অরুনার পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করে।
অরুনা ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে, তিরতির করে কেঁপে ওঠে ঠোঁট জোড়া। ওর মুখে দেখে প্রায় ভেঙ্গে পরে অভি, কিন্তু ভাংলে চলবে না ওকে।
অরুনা ধরা গলায় অভির কাছে কাতর মিনতি করে, “একবার, একবার তুই আমার বোনকে ফিরিয়ে এনেছিলিস। কথা দে আবার ওকে ফিরিয়ে আনবি।”
দাতে দাঁত পিষে নিজেকে সামলে নেয় অভি।
পরী মৃদু বকুনি দেয় অরুনাকে, “কি যা তা বলছিস তুই, পুবালির কিছু হবে না। তুই ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবি আর কিছু দিনের মধ্যেই।” অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি গাধার মতন চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো?”
অরুনাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়ে ব্যানারজি কাকু এসে জিজ্ঞেস করলেন যে ওরা বাড়ি যেতে চায় কিনা। অভি জানাল যে ও হস্পিটালে পুবালির বাবার সাথে থাকবে আর বাকি মেয়েদের নিয়ে বাড়ি চলে যেতে।
পরী অভিকে বলে, “তোমার মনে হয় যে অরুনা এখান থেকে নড়বে?”
অরুনা দিকে তাকায় অভি, অরুনা মাথা নাড়ে, হসপিটাল থেকে যেতে নারাজ যতক্ষণ না পুবালি চোখ খুলে তাকায়। অভি পুবালির মায়ের কাছে যায়, মায়ের মন বাঁধ মানে না, তিনি কিছুতেই নড়বেন না।
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার দায়িত্ব যে ব্যানারজি কাকুর সাথে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফেরা। আমি আর পুবালির বাবা এখানেই থাকছি। তোমরা স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে পরে এস। তুমিও সারা রাত জেগে, কিছুই খাওনি।”
পরী কেঁদে ওঠে, “আমাকে ত বলে দিলে, কিন্তু আমি কি করে পুবালির মাকে নিয়ে যাব সেটা একবার বলে দাও। ওই মায়ের একমাত্র মেয়ে যে আই.সি.ইউ তে।”
অভি পরীকে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে বলে, “প্লিস ওদের নিয়ে যাও এখান থেকে। আমি জানি কি ঘটবে।”
পরী হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, “কি বলতে চাও তুমি?”
অভি, “পুবালি আগে থেকে জানত যে ওর হাতে আর বেশি দিন নেই। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কথা মনে আছে তোমার? আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল পুবালি? সেদিন ও আমাকে বলেছিল যে ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি যেন ওর হয়ে সমুদ্রনীলকে বলি অরুনাকে দেখতে।”
পরী অভির হাত শক্ত করে ধরে বলে, “তুমি আমাকে এত দিন এই কথা জানাও নি কেন?”
অভি, “আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওই কথা কাউকে জানাব না, তাই বলিনি।”
পরী, “আজ তাহলে সেই প্রতিজ্ঞা তুমি ভেঙ্গে দিলে? কি মানুষ তুমি?”
অভি, “পরী, আমি শুধু এই দুঃসময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চাইছি আর কিছু না।”
পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ওকে সান্তনা দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না অভি।
কিছু পরে পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি খুব শক্ত তাই না, কোন দিন চোখের জল ঝরাও না যে?”
অভি, “পরী, আমার এখন চোখের জল ঝরানোর মতন সময় নেই।”
পরী, “অরুনা আর পুবালির মাকে কি করে সামলাবে?”
অভি, “সময়ের সাথে সব কিছু সামলে নেয়, পরী। সময় খুব বড় মলমের কাজ করে।”
পরী অভির জামা ছেড়ে অরুনা আর পুবালির মায়ের কাছে গিয়ে বসে। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে পুবালির মায়ের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পুবালির বাবা, ব্যানারজি কাকু অভির দিকে তাকিয়ে থাকে।
অভি, “পুবালি এখন আই.সি.ইউ তে, সে মত অবস্থায় এখানে বসে থাকা টা বোকামো। আমি আর কাকু এখানে আছি, তুমি মেয়েদের নিয়ে ব্যানারজি কাকুর সাথে বাড়ি যাও, স্নান সেরে খেয়ে দেয়ে চলে এস। এর মাঝে পুবালির জ্ঞান ফিরে এলে তোমাকে জানিয়ে দেব তুমি চলে এস।”
অভির কথায় পুবালির বাবা আর ব্যানারজি কাকু সায় দিলেন। ব্যানারজি বললেন যে যাবার পথে পরীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবেন। ব্যানারজি কাকু মেয়েদের নিয়ে চলে যাবার পরে সমুদ্রনীলকে ফোন করে ডেকে নিল অভি। পুবালি বাবা মাথা নিচু করে বসে, অভির কাছে টাকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা নেই। সময় যেন থেমে গেছে ওদের সামনে।
অভি বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে ব্যানারজি কাকুর সাথে পরী বাড়ি ফিরছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে যদি পরী আবার নারসিং হোমে যেতে চায় তাহলে কি করবে? অভি জানাল যে যদি পরী আসতে চায় তাহলে ও বাবাকে ফোন করে দেবে আর বাবা যেন কোন গাড়ির বন্দবস্ত করে দেয় যাতে পরী নারসিং হোমে আসতে পারে। বাবা জানালেন যে তিনি ব্যানারজি কাকুর সাথে কথা বলে নেবেন পরীর যাওয়ার ব্যাপারে।
পরের ছয় ঘন্টা যেন ওদের কাছে ছয় যুগের মতন মনে হয়। অভি আর পুবালির বাবা অতি উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে থাকে কিছু ভাল খবরের জন্য। বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ, বাড়ির সবাই নারসিং হোম পৌঁছে যায়। অরুনাকে দেখতে না পেয়ে অরুনার দাদাকে অভি ওর কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, ব্যানারজি কাকু অরুনাকে নিয়ে অভিদের বাড়িতে গেছে পরীকে নিয়ে আসতে।
কিছু পরে অভি লক্ষ্য করে যে অরুনা আর পরী নার্সিং হোমে ঢুকছে, পেছনে ব্যানারজি কাকু। অরুনার মুখ থমথমে যেন ওর ওপর দিয়ে এখুনি বিশাল এক ঝড় বয়ে গেছে। পরী অভির কাছে এসে পুবালির খবর জিজ্ঞেস করে, অভি মাথা নাড়িয়ে জানায় যে এখন কোন খবর ডাক্তার জানায় নি। অরুনা ওর মায়ের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে, পরী অরুনার পাশে বসে যায়। অরুনা একবার পরীর দিকে তাকায় থমথমে চোখ নিয়ে।
ঠিক সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, আই.সি.ইউ থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে পুবালির বাবাকে ডাকেন। সবাই ডাক্তারের দিকে উৎকণ্ঠায় তাকিয়ে থাকে। শেষ খবর আসে, পুবালি ব্যানার্জি, এক নিস্পাপ ফুল, খুব লাজুক মেয়ে, জীবনে হয়ত একটা মাছিও মারেনি পুবালি, সেই মিষ্টি মেয়ে যে কোনদিন কলেজে কারুর সাথে উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি, ঝগড়া করা ত দুরে থাক। শুভঙ্কর ব্যানা+জি আর মালা ব্যানার্জির একমাত্র কন্যা সন্তান আর এই পৃথিবীতে নেই।
চাপা ক্রন্দনের রোল জেগে ওঠে চার পাশে। বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসে মায়ের বুক থেকে। পরীর চোখে জল, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে। অরুনা পরীকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে পরে থাকে।
অভি চোয়াল শক্ত করে, হাত মুঠি করে কপালে জোরে এক কিল মারে। বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে ভগবানের দিকে তাকিয়ে, “শেষ পর্যন্ত আমার কথা রাখলে না তুমি।” বার বার জিজ্ঞেস করে ভগবানকে “এই পৃথিবীতে অনেক দুস্করমিরা আছে, তাদের ছেড়ে কেন এক ফুলের মতন নিস্পাপ মেয়ে কে কোলে ডেকে নিল? তোমার যদি সত্যি কান থাকে তাহলে তুমি আমার কাতর প্রার্থনা শুনতে পারতে, কিন্তু হায় বিধাতা, আমার প্রার্থনা শোনার কেউ নেই।”
পরী কিছু পরে অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “অরুনার দিকে তাকাও।”
অরুনার দিকে তাকায় অভি, অরুনা পাথরের মতন বসে নিস্পলক চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে। চেহারা ভাবলেশহীন, চোখে কোন ভাষা নেই, দু’চোখ যেন কাঁচের তৈরি।
বাবাকে ফোন করে খবর দেয় অভি, বাবা তখন অফিস থেকে বের হবেন। অভি বাবাকে সোজা নার্সিং হোমে এসে পরীকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য অনুরধ করল, “তুমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাও, এখানে থাকাটা ওর ঠিক হবে না। ভাগ্যের পরিহাস যা ঘটবার সেটা ত ঘটেই গেছে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাও বাড়িতে মায়ের কাছে ঠিক থাকবে।”
বাবা জিজ্ঞেস করলেন অভিকে, “তোর কি খবর, কাল রাত থেকে ত কোথাও যাসনি। বাড়ি ফিরবি কখন?”
অভি, “এখুনি কিছু বলতে পারছি না, দেখি কাল সকালে বাড়ি ফিরব।”
অভি পরীকে বলল, “তোমার বাবু কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে আসছে, তাঁর সাথে তুমি বাড়ি ফিরে যাও।”
পরী অভির কলার চেপে ধরে বলে, “আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
অভি, “বুঝতে চেষ্টা করও, পরী। আমার বাড়ি যাবার এখন কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সত্যি কথা বলতে এখন অনেক কাজ আছে এইখানে।”
পরী, “তাহলে আমি অরুনার সাথে থাকব।”
অভি, “না তুমি ওর সাথে থাকবে না।”
পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন?”
অভি, “কাল রাত থেকে অনেক কান্নাকাটি করেছ তুমি, আর নয়। তুমি যদি ওর সাথে ওদের বাড়িতে যাও, সেখানে গিয়েও আবার কান্নার রোল শুরু হবে, তাঁর থেকে ভালো কথা বলছি তুমি বাড়ি যাও। তুমি একটু বিশ্রাম নাও বাড়ি গিয়ে তোমার ছোটমায়ের কাছে।”
পরী চাপা স্বরে বলে, “অরুনাকে দেখেছ? চোখের পাতা পড়ছে না ওর, পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা। ও যদি না কাঁদে তাহলে খুব বড় আরেকটা বিপদ হবে। আমাকে ওর কাছে থাকতে দাও।”
অভি, “আমি দেখি কি করতে পারি, কিন্তু তুমি এখন বাড়ি যাবে। অরুনার সাথে ওর বাবা মা আছেন ওকে দেখার জন্য, এখানে আমি কিছু পরে ব্যাস্ত হয়ে যাব তখন তোমাকে দেখার কেউ থাকবে না।”
সবার সামনে এক নতুন সমস্যা দেখা দিল, অরুনা। ও যদি না কাঁদে বা কিছু না বলে তাহলে আরেক বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেরি হবে না।
কিছু পরে অভি আর অরুনার দাদা একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে ফিরে এল। বাড়ির দিকে পুবালির শেষ যাত্রা।
পুবালির দেহ যখন ওদের সামনে আনা হয়, তখন অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধিরে ধিরে পুবালির গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, মনে হয় যেন ডাকছে পুবালিকে চোখ খোলার জন্য, কিন্তু ওর গলা থেকে কোন আওয়াজ বার হয় না। একবারের জন্যেও অরুনার চোখের পাতা পরে না বাঁ ঠোঁট কাপে না। নিস্পলক ভাবে চেয়ে থাকে পুবালির বন্ধ চোখের দিকে। ধিরে ধিরে পুবালির মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে, কপালে ছোটো একটা চুমু খায় আর গলায় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। পাথরের মতন গলা জড়িয়ে পরে থাকে অরুনা। অরুনার এই ব্যাবহার দেখে সবার বুকের ভেতরে এক নতুন ভয় জাগে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে অরুনাকে উঠানোর জন্য। পরী অরুনার পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর পিঠে হাত রাখে। পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে অরুনা ভাবলেশহীন চাহনি নিয়ে তাকায় পরীর দিকে। চোখে জল নেই, চেহারায় কোন বিকার নেই, অরুনা যেন এক পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। পরীর সাথে চুপ করে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসে পরে।
কিছু পরে বাবা পৌঁছে যান নারসিং হোমে আর পরীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ব্যানার্জি কাকু বললেন যে এবারে ওদের বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত।
বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল পুবালির দেহ। সাদা ফুলে আর মভ রঙের শাড়িতে সাজান হল পুবালিকে। পুর সময়াটা অরুনা চুপ করে পুবালির দেহের পাশে বসে থাকে। পুবালির প্রাণহীন হাত নিজের হাতে নিয়ে আঙ্গুলে হাত বুলিয়ে দেয়। দেখে মনে হয় যেন এই ওর বোন আবার জেগে উঠে ওর সাথে কথা বলবে। কিন্তু হায় বিধাতা, পুবালি যে চির নিদ্রায় মগ্ন।
বাড়ি থেকে যখন ওকে নিয়ে বের হবে সবাই, তখন অভি লক্ষ্য করে কলেজের বন্ধুদের। বিদায়ের শেষ ক্ষণ উপস্থিত। পুবালির অন্তিম যাত্রা। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল জেগে ওঠে, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে অরুনার মা কেঁদে ওঠেন। কিন্তু অরুনা নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে পুবালির মুখের দিকে, চোখে জল নেই, অতি শিতল সেই চোখের চাহনি। অভি এবং বাকিরা পুবালিকে কাঁধে করে বাইরে নিয়ে আসে। অরুনা চুপ করে বাড়ির গেট পর্যন্ত ওদের সাথে আসে তারপরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ পুবালিকে গাড়িতে তোলা না হয়। তারপরে অরুনা ফিরে যায় বাড়ির মধ্যে, নিজের ঘরে ঢুকে পরে বিছানায় শুয়ে পরে। বাড়ির বেশির ভাগ মহিলাদের নিমতলা শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় না।
নিস্পাপ ফুলের কুঁড়ি, পুবালি ব্যানারজির নস্বর দেহ আগুনে জ্বলে পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যায়। সেইদিন অভি তাঁর জীবনের সবথেকে মর্মস্পর্শী দৃশ্য চোখের সামনে দেখে, স্নেহ ভরা বুকে নিয়ে এক পিতা তাঁর চোখের মণি একমাত্র কন্যের মুখাগ্নি করছেন। ভগবানের কাছে কাতর আবেদন জানায় অভি, যেন কোন পিতাকে তাঁর কন্যার মুখাগ্নি না করতে হয়।
সমুদ্রনীল আর অভি চুপচাপ দুজনে গঙ্গার তীরে বসে রাতের আকাশের তারা দেখতে থাকে।
সমুদ্রনীল অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অরুনা যদি কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে কি হবে? ও ত পাগল হয়ে যাবে, আরও বড় কোন বিপদ ঘটবে।”
অভি, “তুই ওকে ভালোবাসিস, তোকেই কিছু করতে হবে।”
সমুদ্রনীল, “আমি কি করতে পারি, তুই ওকে আমার চেয়ে ভাল করে চিনিস। পুবালির পরে শুচিদি ওর সব থেকে কাছের মানুষ। যদি কিছু করতে পারিস সেটা তোরাই করতে পারিস।”
অভি চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখে যে ওদের কেউ দেখছে কিনা। পরিবারের বাকি লোকজন, কিছু দুরে একটা ছাওনির তলায় বসে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে অভি,
“তুমি আমার জীবনের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছ, আমার আঁকা, আমার কবিতা, আমার লেখা। তুমি আমার জীবনের সব থেকে ভাল বন্ধুর বোনকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছ। তুমি আমার কাছ থেকে আর কি চাও? শেষ বারের জন্য তোমার সামনে প্রার্থনা করছি যে আমার ভালোবাসা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিওনা। যদি সেটাও চলে যায় তাহলে আমি জানব যে এই জগতে ভগবান বলে কিছু নেই, আছে শুধু পাথরের এক মূর্তি। শুধু একবারের জন্য প্রমান কর যে তুমি সত্যি আছো।”
সুকৌশল প্রতিজ্ঞা
যত দিন যায়, অরুনার শারীরিক অবস্থার অধঃপতন হয়। সেই দিনের পর থেকে অরুনা কারুর সাথে কথা বলেনি, একদম চুপ করে গেছে, ভাবলেশহীন চেহারা, দুচোখ যেন কাঁচের তৈরি। দিন রাত পুবালির ঘরের মধ্যে কাটায়, প্রকাশহীন নয়নে চেয়ে থাকে টেবিলে ছড়ানো বই গুলর দিকে, পুবালির আল্মারির দিকে যেখানে পুবালি জামা কাপড় রাখত, ফটোর অ্যালবাম হাতে নিয়ে ওদের ছোটো বেলার ছবি দেখে। অরুনা পুবালির চেয়ে মাত্র তিন মাসের বড়, ছোটো বেলা থেকে হরিহর আত্মা ওরা দু’জনে, যেখানেই যেত বা যা কিছু করত, দু’জনে একসাথে করত। শুধু একজন একটু চঞ্চল আরেকজন শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল।
অভি মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি গিয়ে অরুনার খবরা খবর নিত। পরীর সাহসে কুলায় না যে অরুনার অভিব্যাক্তিহীন চোখের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। পরী নিজেই এত আঘাত পেয়েছিল যে নিজেকে একটা কচ্ছপের খোলের মধ্যে লুকিয়ে নিয়েছিল, ওর ছোটো মা ওর পাশে না থাকলে একদম ভেঙ্গে পড়ত।
পুবালির কাজের দিনে অভিদের যাওয়ার কথা। পরী কান্না শুরু করে, যে ও কিছুতেই ওই বাড়ি যাবে না, কিছুতেই ও অরুনার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। মা আর অভি অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে পরী কে কিন্তু পরী অটল, ও যাবে না।
শেষ পর্যন্ত বাবা ওকে বললেন, “দেখ সোনামা, আমাদের জীবন একটা নদীর মতন, নদী যেমন চলতে চলতে অনেক বাঁক অনেক বাধার সম্মুখিন হয়, তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক বাঁধা বিপত্তি আসে, কিন্তু নদীর জল কি আর থেমে থাকে মা, সেত নিজের খেয়ালে বয়ে চলে সাগরের পানে। আমি তোকে পুবালিকে ভুলে যেতে বলছি না, আমি তোকে শুধু একটা অনুরধ করব যে জীবন কারুর একার জন্য থেমে যায় না। ইংরাজিতে একটা কথা আছে সোনামা, Rolling stone gather no moss. তুই যদি জীবনের সাথে পা মিলিয়ে না চলিস তাহলে তুই পিছিয়ে পড়বি। সেই দিনের পর থেকে তুই অরুনার সাথে একবারের জন্যেও দেখা করিস নি। ভালো মেয়ের মতন চোখের জল মুছে আমাদের সাথে ওদের বাড়ি চল সোনামা।”
পরী দরজা বন্ধ করে বুক ফাটীয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি বুঝি না কেন এই সব আদিখ্যেতা দেখানো? পুবালির চলে যাওয়া কেন লোক খাওয়ান? কোন বৃদ্ধ যদি জেতেন তাহলে আমি নিজেকে বুঝাতে পারতাম। কিন্তু ফুলের মতন নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক মেয়ের চলে যাওয়ায় এই সব কেন?”
বাবা, “দেখ মা, আমরা মানুষ, আমরা সামাজিক প্রাণী। এই সমাজের কিছু নিয়ম কানুন আছে, এই সমাজে থাকতে হলে আমাদের সেই নিয়ম, কানুন মেনে চলতে হয় নাহলে আমরা মানুষ বলে গন্য হব না।”
বাবার কথা শুনে, পরী দরজা খোলে, মা ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেয়। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা সবাই ব্যানারজি কাকুর বাড়ি পৌঁছে যায়। এক মুহূর্তের জন্যেও পরী ওর ছোটমায়ের কাছ ছাড়ে না।
ওদের বাড়ি পৌঁছানর পরে, অভি ওপরে উঠে পুবালির ঘরের মধ্যে ঢোকে। যথারীতি, অরুনা চুপচাপ শুয়ে পুবালির বিছানার ওপরে। চুপ করে দরজায় দাঁড়িয়ে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, ভেতরে গিয়ে ওকে কিছু বলার সাহস পায় না অভি। কিছু পরে, অরুনার মা ওকে ডেকে নিয়ে যান নিচে। বলেন যে অভির সাথে ওদের কিছু কথা আছে।
নিচে নেমে এসে দেখে যে একটা ঘরে বাড়ির সব লোক জন জড় হয়েছে। ব্যানারজি কাকু, কাকিমা, বাবা মা, পরী, পুবালির বাবা মা। অভি ঘরের মধ্যে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ব্যানারজি কাকু একবার বাবার দিকে তারপর অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “অরুনার শারীরিক আর মানসিক সাস্থের দিনের পরদিন অধপতন হয়ে চলেছে, আর আমরা খুব চিন্তিত তাঁর জন্য। আমরা ওকে সাইকিয়েট্রিস্ট দেখিয়েছি, ওষুধ ও দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ও কোন কথা না বলা পর্যন্ত বা কোন কিছু প্রকাশ না করা পর্যন্ত ডাক্তার জানিয়েছেন যে মানসিক অবস্থা আরও ভেঙ্গে পড়বে।”
অভি হাঁ করে সবার দিকে চেয়ে থাকে, ওরা সবাই অভিকে এই সব কথা কেন বলছে, কিছুই বুঝতে পারছে না অভি। পুবালির মায়ের গলা ধরে আসে কান্নায়, “অভিমন্যু আমি এক মেয়ে হারিয়েছি, আমার আর শক্তি নেই আরেক মেয়ে হারানর।”
অভি পরীর দিকে তাকায়, ইশারায় জিজ্ঞেস করে যে কি চলছে? পরী ইশারায় উত্তর দেয় যে এসব ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
অরুনার মা অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, “অভিমন্যু, আমরা সবাই জানি যে তুমি অরুন্ধতিকে ভালোবাসো।”
অরুনার মায়ের কথা যেন অভির বুকে এক শক্তিশেল বানের মতন এসে গেঁথে। কান মাথা গরম হয়ে যায় অভির, ভাবাবেগে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে পরীর দিকে তাকায়। পরী মায়ের চেয়ারে পেছনে দাঁড়িয়েছিল, প্রানপন শক্তি দিয়ে চেয়ারের পেছনটা ধরে থাকে। বুক ফেটে যায় ওর, ওই কথা শুনে।
অরুনার মা, “তুমি যদি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পার, তাহলে তুমি যা চাইবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।”
অভির পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল, চোয়াল শক্ত করে, চোখ বন্ধ করে বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গ টাকে শান্ত করার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেউ যেন ওর মাথায় তরল আগুন ঢেলে দিয়েছে, “কি বলছে কাকিমা? এটা কি করে সম্ভব? দুঃস্বপ্নেও এই পাপের কথা ও চিন্তা করেনি। হ্যাঁ, সবার মনের ভেতরে এক ভ্রান্তি ছিল আর সেটা ওরা একদিন কাটিয়ে দেবে তাও ঠিক করেছিল, কিন্তু তাঁর আগেই এই সব?”
ও জানে যে পরী এই কথা শুনে, মরমে মরে যাচ্ছে। চোখ খুলে পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে যে পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রাণপণে নিজের মনকে সামলানোর প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরী, চেহারায় ফুটে উঠেছে এক অব্যাক্ত বেদনার ছাপ, সেই বেদনা ওই ঘরের কেউ টের পেলনা শুধু একমাত্র অভি ছাড়া। পরীর বুকের মধ্যে যেন এক স্টিম ইঞ্জন দউরাচ্ছে যেন, চোখের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দুঃখে বেদনায় কান নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে পরীর।
পরী ছাড়া বাকি সবাই অভির উত্তরের প্রতীক্ষায়। অভি সবার মুখের দিকে একবার তাকায়, নিরুপায় আজ বীর অভিমন্যু, জানেনা ওর প্রতিজ্ঞার ফল ওদের জীবন টাকে কোথায় নিয়ে যাবে, কিন্তু অভি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে যে কিছু একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সবার আশা ভরশা এভাবে ভেঙ্গে দেওয়া ঠিক হবে না। অভিমন্যুর অভি বুকের ভেতর থেকে বলে ওঠে, “ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেবে অভিমন্যু, তোমার ভালোবাসা আর তোমার স্নেহ আজ দুজনের পরীক্ষা, আজ দুজনেই তোমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে।”
হাঁটু গেড়ে অরুনার মায়ের সামনে বসে পরে অভি, অরুনার মায়ের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, “আমি কথা দিচ্ছি যে আমি তোমার মেয়েকে তোমার কোলে ফিরিয়ে দেব।”
আড় চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। পরীর দুচোখ শক্ত করে বন্ধ, মাথা নিচু। মুখে দেখে মনে হচ্ছে যেন বুক এখুনি ফেটে যাবে। প্রাণপণে চোখের জল আর বুকের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে রেখেছে পরী। অভি যেন ঘরের মধ্যে পরীর হৃদয় ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পায়। সবার চোখে, পরী অরুনার জন্য চোখের জল ঝরাচ্ছে, কিন্তু একমাত্র অভি ওর মনের অবস্থা জানে, কেন পরীর বুকের মধ্যে এই উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে। রাগে, দুঃখে বেদনায়, পাথরের মতন দাঁড়িয়ে থাকে পরী।
অভি একবার মাথা নিচু করে মেঝের দিকে দেখে অরুনার মাকে বলে, “আমাকে কথা দাও যে আমি যা চাইব তাই যেন তোমরা মেনে নাও।”
ব্যানারজি কাকু ওর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে, “তুমি যা চাইবে সেটা তুমি পাবে, আমরা সবাই মেনে নেব। আমি আজ সবার সামনে তোমাকে কথা দিচ্ছি।”
সবার সামনে অভি প্রতিজ্ঞা করে দিল কিন্তু জানেনা যে সেই প্রতিজ্ঞার ফলাফল, ওদের দুজনের জীবনকে কোন মোড়ে নিয়ে যাবে। নদী কোন খাতে বইতে চলেছে, কিছুই জানে না, পরীর আর অভির সম্পর্কের কি হবে জানে না, সবকছুই এক বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্যে যেন ডুবে গেল। পুবালিকে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে সুমদ্রনীল যেন অরুনাকে দেখে, সেই প্রতিজ্ঞা অভি কি করে পূরণ করবে, জানে না।
বাড়ি ফিরে যাবার আগে অভি পুবালির ঘরে যায় অরুনাকে দেখার জন্য। অরুনা এক রকম ভাবে বিছানায় শুয়ে এমন কি পাশ ফিরে দেখেওনি যে কে এল কে গেল। বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে অভির, কিন্তু সেই ভাঙ্গা বুকের কান্না কেউ শুনতে পায় না।
বাড়ি ফেরার সময়ে সারা রাস্তা কারুর মুখে কোন কথা ছিল না, বাবা মা অভি পরী, সবাই চুপ। সবার মনের মধ্যে এক সংশয়ের দানা বেঁধে উঠেছে, বাবা মায়ের চিন্তা অন্য খাতে। অভির মাথায় অন্য চিন্তা, কি করে পরীর প্রতি ওর ভালোবাসা রক্ষা করবে আর একদিকে ব্যানারজি কাকু দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।
বাড়ি ঢুকেই পরী নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে বিছানায় লুটিয়ে পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। বাবা মা শুতে চলে যান, অভি নিরুপায় হয়ে কিছুক্ষণ বসার ঘরে বসে থাকে তারপরে ছাদে নিজের ঘরে চলে যায়।
ঘুম আসে না অভির, ছাদের মেঝেতে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার মিটিমিটি চাহনি দেখতে থাকে। মাথা যেন খালি হয়ে গেছে, কিছুই ভাবার শক্তি নেই যেন। কয়েক দিনে আগে পূর্ণিমা ছিল তাই চাঁদ বেশ বড় দেখাচ্ছিল। সেই চাঁদও যেন ওর কাছে কাঁদছে, আকাশের তারার ঝিকিমিকি যেন ম্লান হয়ে এসেছে ওর বুকের বেদনার সামনে। অভির মনের মধ্যে উদ্দম ঝড় বয়ে চলে, “এ আমি কি করেছি? কি করে আমি আমার প্রতিশ্রুতি আর ভালোবাসা রক্ষা করব? আমি পরীর কাছে কথা দিয়েছি যে ওকে ছেড়ে আমি যাবো না, ওদিকে পুবালি কেও কথা দিয়েছি যে সমুদ্রনীলের হাতে অরুনার হাত তুলে দেব। আবার ব্যানারজি কাকুর কাছেও প্রতিজ্ঞা করেছি যে অরুনাকে ফিরিয়ে দেব ওদের বুকে। কিন্তু কি করে হবে, একসাথে এত গুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা।”
মাথার নিচে দুহাত ভাঁজ করে ছাদের ওপরে শুয়ে পড়ল অভি। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ জানে না, ওর চিন্তনের শৃঙ্খলা ভং হয় মৃদু পদক্ষেপের শব্দে। পরী ওর পাশে এসে বসে, জল ভরা ব্যাথা মাখানো চোখ নিয়ে তাকায় অভির মুখের দিকে। কেঁদে কেঁদে পরীর কাজল কালো চোখ দুটি জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে।
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ওইরকম একটা কথা দিতে গেলে কেন?”
অভি চুপ, উত্তর দেবার ভাষা নেই অভির কাছে। পরী ওর বুকের ওপরে লুটিয়ে পরে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “অভি কথা বলো, কেন এই প্রতিজ্ঞা করতে গেলে তুমি? আমার ভালোবাসা কি কিছুই নয় তোমার কাছে? কেন আমার বুক ভেঙ্গে দিলে?”
অভি পরীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। পরী মুখ তুলে ওর বেদনা ভরা চোখের দিকে তাকায়, “তুমি কি একটি বারের জন্যেও আমার কথা ভেবে দেখলে না? আমি তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকব, অভি?”
অন্ধকার আকাশের মাঝে পুবালির চোখ ভেসে ওঠে। পুবালি নেমে এসে অভির কানে কানে বলে, “তুই আমাকে কথা দিয়েছিলিস আর শুচিদি কেও কথা দিয়েছিলিস। তুই কারুর হৃদয় ভেঙ্গে দিতে পারিস না, অভি। তুই আজ মহাভারতের অভিমন্যুর মতন চক্রবুহ্যের মাঝে পরে গেছিস। কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে মহাভারতের অভিমন্যুর হার হয়েছিল, কিন্তু আমার অভিমন্যু হারতে পারে না। উঠে দাঁরা অভি, যুদ্ধ কর নিজের সাথে আর ততক্ষণ যুদ্ধ কর যতক্ষণ তুই তোর কারযে সফলতা প্রাপ্তি ঘটে।”
অভি পরীর মুখ হাতের মাঝে আঁজলা করে নিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। পরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে যে অভির বুকের ভেতরে কি চলছে।
অভি, “তুমি কি ভেবেছিলে? যে আমি অরুনাকে বিয়ে করব?”
মাথা নাড়ায় পরী, “হ্যাঁ, আমি তোমার কথা শুনে তাই ভেবেছিলাম। তুমি অরুনার মুখ দেখে আর সবার চাপের সামনে মাথা নত করে শেষ পর্যন্ত হয়ত অরুনাকে কাছে টেনে নেবে। আমি জানি যে এক সময়ে অরুনার প্রতি তোমার কিছু দুর্বলতা ছিল।”
অভি, “পরী, আমি তোমাকে আর শুধু তোমাকেই ভালবাসি। তুমি ছাড়া এই বুকে আর কেউ স্থান নিতে পারে না, পরী।”
পরী, “তাহলে তুমি ওই রকম কথা দিলে কেন?”
অভি মৃদু হেসে বলে, “আমার মাথায় এক পরিকল্পনা এসেছে, যাতে করে সবার মন রক্ষা হবে।”
পরী অবাক হয়ে অভির মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
অভি বলে, “অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো আমরা, আমাদের সেই পুরানো জায়গায়। একটা নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গায় আশা করি অরুনা ভালো হয়ে যাবে। ওকে শুধু ওর চারপাশের চাপা অবস্থা থেকে বের করা দরকার আর একটু স্নেহের ছোঁয়া দরকার যাতে ওর বুকের ভেতরে যে ব্যাথার পাথর জমে আছে সেটা গলে যায়।”
অভির কথা শুনে পরী চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর পরবর্তী পদক্ষেপ। অভি বলে, “আমার যতদূর ধারনা যে আমাদের সাথে গেলে ওর মনের অবস্থা ফিরে আসবে। ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে আমি ব্যানারজি কাকুকে ওর আর সমুদ্রনীলের সম্পর্কের কথা বলব। ব্যানারজি কাকু আমাকে কথা দিয়েছেন যে আমার কথা তিনি শুনবেন, সুতরাং আশা করি তিনি মর্মাহত হবেন না এবং আমার কথা রাখবেন। এই ভাবে সবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা হবে। শুধু একটা কথা, আমাদের সম্পর্কের কথা কাউকে এখুনি জানানো হবে না, কেননা এটা ঠিক সময় নয়। আমার হাতে আরো সময় দরকার পরী, আমাকে চাকরি পেয়ে দাঁড়াতে হবে যাতে আমি বাবা মায়ের সমকক্ষ হয়ে তাদের সম্মুখিন হতে পারি, আর যা আমার নিজের তা আমি দাবি করতে পারি।”
প্রায় একপক্ষ কাল পরে, পরীর মুখে হাসি দেখে অভি অভিভূত হয়ে গেল। এতদিন পরীর মনে শুধু অরুনার জন্য চিন্তা ছিল আর আজ অভির প্রতিজ্ঞা ওকে মৃতপ্রায় করে দিয়েছিল। অভির ঠোঁটের ওপরে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “তুমি কে?”
পরীর মধুঢালা স্বর পুনরায় শুনে অভির মন গলে গেল, ক্ষণিকের জন্যে ওর মনে হয়েছিল যে পরীকে হারিয়ে ফেলছে।
অভি ওর কোমর জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল, পরী যেন ওর উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে অভির বুকে গলে গেল। অভি ওর কানে কানে বলে, “মনে আছে একদিন তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি আমার মন্ত্রী বুদ্ধিদাত্রি। আজ আমি তোমাকে বলছি, যে আমি তোমার মন্ত্রী, তোমার বুদ্ধিদাতা, আমি তোমার কার্ত্তিক, আমি বটবৃক্ষ তোমাকে ছায়া দেবার জন্য আর আগলে রাখার জন্য, আমি তোমার সস্নেহময় পিতা আর রতিক্রিয়ায় আমি কামদেব।”
পরীর চোখ ভাবাবেগে চিকচিক করে ওঠে। অভি ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের ওপরে টেনে নেয়। একে ওপরের আলিঙ্গন বদ্ধ হয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকে। ওদের নিবিড় প্রেমালিঙ্গনের সাক্ষী হয় আকাশের চাঁদ আর ঝকমকে তারা।
একটু চিন্তা করার পরে অভি বলল, “কিন্তু এর মধ্যে একটা সমস্যা আছে, পরী।”
পরী, “কি সমস্যা আবার উদয় হল?”
অভি, “আমি অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাব সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমাদের সাথে যদি তুমি যাও তাহলে তোমার সন্দেহ বাতিক ছোটো মায়ের মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে আর তোমাকে বাড়িতে আটকে রাখবে। সেই সমস্যার একটা সমাধান আছে আমার কাছে, তুমি কল্যাণী আর রানীকে ফোন করে বল, আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে। তারপরে তুমি তোমার ছোটো মাকে জানাও যে তুমি রানী আর কল্যাণীদের সাথে হিমাচল প্রদেশ ঘুরতে যেতে চাও এবং সাথে অরুনাকে নিয়ে যেতে চাও। তাহলে তোমার ছোটমা তোমাকে বারন করবে না এবং ব্যানারজি কাকুও তোমাকে বারন করবে না কারন তিনি জানেন যে তুমি অরুনাকে খুব স্নেহ করো। যখন অরুনা তোমার সাথে যাবে তখন সবাই আমাকেও তোমাদের সাথে যেতে বলবে, ব্যাস সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
নাকের ওপরে নাক ঘষে পরী মৃদুকনে বলে ওঠে, “আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি বলে বুঝাতে পারব না অভি…”
অভি দেখল যে পরী হয়ত ভাবাবেগে এখুনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে দেবে তাই ঝট করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ওর ভাবাবেগ প্রেমের আবেশে বদলে দেয়। কিছু পরে নিজেকে অভির ঠোঁট থেকে মুক্ত করে লাজুক হেসে বলে, “তুমি না খুব শয়তান ছেলে।”
মাথা হেলায় অভি, “উম্মম হানি, আমি তোমার বুদ্ধিদাতা মন্ত্রী।”
মাথা নাড়িয়ে অভির সারা মুখে চুলের পরশ ছড়িয়ে দেয় পরী। মখমলের মতন চুলের পরশে প্রেমাবেগে চেপে ধরে পরীকে নিজের বুকের কাছে। পরীর কোমল বুক জোড়া অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষ্ট হয়ে যায়। পরীর কোমল পিঠের ওপরে হাত বুলাতে শুরু করে দেয় অভি, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে নখের আলতো আঁচর কেটে দেয় মাঝে মাঝে। ওর ছোটো নরম গোল পেট অভির নগ্ন পেটের ওপরে মাখনের মতন লেপে যায়। দুজানু জোড়া করে অভির জানুর ওপরে রেখে দেয় পরী। অভি ধিরে ধিরে হাত নিয়ে যায় সুগোল নিতম্বের ওপরে, আলতো করে চেপে ধরে কোমল নারী মাংস। উত্তপ্ত হাতের চাপে পরীর বুকের মাঝে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে, শরীর গরম হয়ে ওঠে প্রেমের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে।
তপ্ত নিঃশ্বাসে অভির মুখ ঝলসে যায় প্রায়, পরী মাথা নিচু করে অভির কাঁধে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘাড়ে কানে চুমু দিতে থাকে। গালে গাল ঘষে বারবার। মৃদু ঘর্ষণের ফলে দুই শরীরে আগুনের ফুল্কি ছিটকে যায়। অভির বুকে কামনার উত্তাল তরঙ্গ দোল খায়, প্রেয়সীর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। বাম হাতে পরীর মাথার চুল মুঠি করে ধরে মাঝে মাঝে আঁচরে দেয়। বুকে যেন কামনার বিশাল ঝড় শুরু হয়ে যায়।
অভি দুই পা একটু ফাঁক করে দেয়, পরীর জানু অভির মেলে ধরা পায়ের ফাঁকে গলে যায় আর অভি চেপে ধরে পরীর শরীর। প্রেমের আলিঙ্গনে এতই বিভোর দুই কপোত কপোতী যে ওরা ভুলেই গেছে যে ওরা তখন খোলা আকাশের নিচে।
গ্রীষ্ম কালের মৃদুমন্দ বাতাস ওদের বুকের আগুন যেন আরও জ্বালিয়ে তোলে। মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে দুই শরীর।
অভি ওর কানে কানে বলে, “বেবি…”
পরী ফিসফিস করে বলে, “ম্মম্মম্মম…… কি হল”
অভি ওর সুগোল নরম নিতম্ব চেপে ধরে বলে, “আমারা কি সেলিব্রেট করব?”
নিতম্ব চেপে ধরে পরীর নিম্নাঙ্গ টেনে ধরে নিজের তপ্ত কঠিন সিংহের ওপরে। পরী নিজের নিচে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে মোচর দেয়। শরীরের মোচরের ফলে বারে বারে অভির সিংহ গিয়ে ধাক্কা মারে পরীর নারীত্বের দোরগোরায়। পরীর বক্ষোপরি তপ্ত নুড়ি অভির নগ্ন বুকে আঁচর কাটতে থাকে, পুড়িয়ে দেয় যেন অভির ত্বক। অভি থাকতে না পেরে চেপে ধরে ওর পুরুষ সিংহটিকে পরীর ঢাকা নারীত্বের দোরগোড়ায়। পরী মৃদুসুরে ককিয়ে ওঠে। প্রেমের দুধ সাগরে ডুব দেবার প্রস্তুতি আসন্ন। অভির মোচর আর চাপের ফলে পরী সিক্ত হয়ে ওঠে, কিছু টা ঘামে কিছুটা প্রেমে।
অভি আবার জিজ্ঞেস করে, “সোনা, আমার এবারে সেলিব্রেট করি?”
পরী ওর কাঁধ থেকে মাথা না উঠিয়ে কানে কানে বলে, “এত কিছু করে, আমার ভেতরে আগুন জ্বালানর পরেও তুমি জিজ্ঞেস করবে, শয়তান ছেলে।”
অভি দুষ্টুমি করে বলে, “ভদ্রলোকেরা সবসময়ে জানান দিয়ে ঘরে ঢোকে সোনা, আর তুমি ত আমার স্বর্গের অপ্সরা, তোমাকে না জানিয়ে কি করে…”
পরী, “উম্মম… কত আমার ভদ্রলোক। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে নয়।”
অভি, “আমাদের কেউ দেখতে পাবে না বেবি।”
পরী, “শয়তান ছেলে, আমার কি লজ্জা করে না নাকি। এই রকম খোলা জায়গায় কি মানুষে এসব… ধুত তুমি না…”
পরী মাথা তুলে তাকায় অভির বাসনা তারিত চোখের দিকে। চিবুকের ওপরে চিবুক রাখে পরী, আলতো করে জিব বের করে চেটে দেয় অভির ঠোঁট। আধবোজা ঠোঁটের ভেতর থেকে উষ্ণ নিঃশ্বাস স্নান করিয়ে দেয় অভির সারা মুখ।
অভি সিনহটিকে মোচর দিয়ে পরীর জানুসন্ধিতে পিষে দিয়ে বলে, “আমি আর থাকতে পারছিনা বেবি। আমাকে তুমি তোমার আলিঙ্গন থেকে অনেক দিন হতে বঞ্চিত করে রেখেছ। আমার ভেতরে বাঁধ আজ যেন ভেঙ্গে যাবে তোমার কোমল ছোঁয়ায়, তোমাকে আমার সাথে মিলিয়ে নেব আজ এই রাতে।”
অভির হাত নিচে নেমে যায়, পরীর গায়ের কাপড় ধিরে ধিরে টেনে উঠাতে শুরু করে। গ্রীষ্মের মৃদু বাতাস পরীর নগ্ন পায়ের গুলির ওপরে বয়ে যায়। আরও ওপরে টানে পরীর রাত্রিবাস, জানুর মাঝে মৃদু বাতাস ছুঁয়ে যায়।
পরী চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “শয়তান ছেলে… এখানে নয়।”
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু পরী সর্ব শক্তি দিয়ে অভিকে ছাদের মেঝের সাথে চেপে ধরে থাকে। পরী মৃদু সুরে বলে, “তুমি যদি আমার সাথে এই খোলা আকাশের নিচে… তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কোনদিন কথা বলব না।”
আস্তে করে পরীকে জড়িয়ে ধরে উঠে পরে অভি, পরী ক্ষণিকের জন্যেও অভির গলা ছারেনা। পরীকে কোলের ওপরে উঠিয়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
আলো জালাবার জন্য হাত বাড়ায় অভি, পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “একদম আলো জ্বালাবে না কিন্তু।”
অভি, “কেন কি হল? আমি আমার পরীকে একবার পুরোপুরি দেখতে চাই।”
বিছানার চাদরে নিজেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নেয় পরী, ঠিক যেন মিশরের মমির মতন দেখায় ওকে। দুষ্টু হেসে পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ এবারে আলো জ্বালাতে পার তুমি, আমি এই বিছানার চাদর গা থেকে নামাব না।”
দু’চোখ প্রেমের আবেগে চিকচিক করে ওঠে, ঠোঁটে লেগে কামনার তপ্ত আগুন। অভির সারা শরীরে ঘাম দেয়, সিংহ মাথা উঁচু করে নিজের জানান দেয়, বারে বারে ভেতর থেকে গর্জে ওঠে। গালের টোল যেন উত্তপ্ত লাভার ছোঁয়া পেয়ে লাল হয়ে উঠেছে।
অভি আলো জ্বালিয়ে পরীর দিকে এগিয়ে যায়, “তুমি তাহলে আমার সাথে খেলা করতে চাও, দুষ্টু মেয়ে।”
অভি ওর পায়ের দিক থেকে বারে বারে চাদর টেনে নিতে চেষ্টা করে আর বারে বারে পরী পা ছুঁড়ে ওকে আটকে দিতে চেষ্টা করে। অভি বিছানার ওপরে চরে যায় আর পরী ঘুরে শুয়ে পরাতে গায়ের থেকে চাদর সরে যায়। সুযোগ বুঝে শয়তানি করে পরীর কাপড় জানু ওপরে উঠিয়ে দেয়, পেলব মসৃণ জানুর ওপরে অভির উত্তপ্ত চোখের চাহনি যেন ফোস্কা ফেলে দিতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পা ঢেকে দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে পরী। অভি আর থাকতে পারেনা আর শেষ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পরে প্রেয়সীর ওপরে, পরী সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে আলো নিভিয়ে দেয় আর সারা ঘর অন্ধকারে ঢেকে যায়। জানালা দিয়ে চাঁদের নির্মল আলো ওদের বিছানার ওপরে খেলা করে ওদের উষ্ণ শরীর স্নান করিয়ে দেয়।
ঘামে নাকের ডগা চাঁদের আলোয় চিকচিক করে, পরীর মুখ দেখে অভি নিজেকে আর দুরে সরিয়ে রাখতে পারে না। ওর ওপরে উঠে গিয়ে, দেহের দুপাসে হাত রেখে শরীরের নিচের অংশ পরীর ওপরে চেপে ধরে। পরীও শয়তানি করে জানু চেপে ধরে যাতে অভি ওর পায়ের ফাঁকে নিজেকে নিয়ে যেতে না পারে। অভি ঝুঁকে পরে পরীর মুখের ওপরে, পরীর দু হাত উঠে আসে অভির কাঁধের ওপরে আর ওর মাথা টেনে নিচে নামিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। ঠোঁটের মধুতে ভরিয়ে দেয় অভি পরীর সারা মুখ, জিবের ডগা ঢুকিয়ে দাঁতের পাটির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। পরী আর যেন নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারেনা অভি কামাগ্নির পরশ থেকে, ধিরে ধিরে জানু মেলে ধরে আহবান জানায় অভিকে। অভি নিম্নাগ চেপে ধরে পরীর নারীসুখের ওপরে। চুম্বন টিকে না থামিয়ে পরী চাদর টেনে দেয় ওদের গায়ের ওপরে। ওর যে ভীষণ লজ্জা। একে ওপরকে বাহু পাশে বেঁধে ফেলে ওরা।
শরীরের যত রমকুপ ছিল সবকটা উন্মুক্ত হয়ে ওঠে প্রেমের আগুনে, ধিরে ধিরে একে ওপরের হাত ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়। প্রেমের সেই সুন্দর স্বর্গ উদ্যানে ঘুরে বেড়ায়। রতিক্রীড়া শেষে অভির মনে একটা বেদনা থেকেই যায় যে প্রেয়সীর সম্পূর্ণ রুপ দর্শন সে আজও মন ভরে দেখতে পারল না।
Thanks for reading: ভালবাসার রাজপ্রাসাদঃ ৪র্থ অধ্যায় [১ম পরিচ্ছেদ] Written By Pinuram, Sorry, my English is bad:)