চতুর্থ অধ্যায়ঃ দিবস রজনীর গল্প [CONTINUED]
লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#01)
অভির সুকৌশল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওরা দুজনে একদম মেপে মেপে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। সর্বপ্রথম পরী কল্যাণী আর রানী কে ফোন করে পরিকল্পনার কথা জানায়। ওদের যে হেতু এখন কোন সন্তান নেই তাই ওরা সব শুনে পরীদের সাথে যেতে রাজি হয়। তারপরে পরী ব্যানারজি কাকুকে বাড়িতে ডাকে। ইচ্ছে করেই অভি সেই দিন বাড়িতে থাকে না। পরী, ব্যানারজি কাকুকে বুঝিয়ে রাজি করে যে ও অরুনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়, যাতে অরুনার মনের পরিবর্তন হয়। বাবা মা ওর কথায় খুব খুশি হয়ে মত দেন। অভি বাড়ি ফেরার পরে বাবা ওকে সব ঘটনা জানিয়ে বলেন যে মেয়েদের সাথে যেতে, যেহেতু বাড়ির কেউ পরীর বান্ধবীদের ভাল ভাবে চিনত না। সবকিছু অভির আর পরীর সুকৌশল পরিকল্পনার মতন হতে থাকে।
অভি ঠিক করে যে এবারে ও আরও দুরে যাবে। পুরো লাহুল স্পিতি উপত্যকা ঘুরবে, পরীকে নিজের অভিপ্রায় জানাতে পরী খুশিতে নেচে ওঠে। সবকিছু ঠিক হয়, যাবার দিন ঠিক হল যে ওরা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বেড়িয়ে পড়বে। পুর ট্রিপ করতে প্রায় চোদ্দ দিনের মতন লেগে যাবে। যাবার আগে অভি ভালো করে সেই জায়গার বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেয়, কোথায় কি ভাবে যাবে, কোথায় থাকবে সব খুটিনাটি তথ্য যোগাড় করে ফেলে। পরীকে পুরো ঘোরার রাস্তা এবং সব কিছু তথ্য জানায়। ওরা নিউ দিল্লী থেকে কাল্কা হয়ে সারাহান, রেকংপিও হয়ে সোজা নাকো চলে যাবে। তারপরে নাকো থেকে এবারে আগে যাবে ওরা, তাবো, কাজা হয়ে কুনযুম পাস। তারপর রহতাং পাস হয়ে মানালি ঢুকে, মান্ডি হয়ে দিল্লী ফিরবে। পরীকে ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ভ্রমণের পরিকল্পনা যাতে ও দিপঙ্কর কে বুঝিয়ে বলতে পারে। কেননা, অভির বাবা মা দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করবে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে এবং সেই জায়গার সম্বন্ধে আরও তথ্য জিজ্ঞেস করতে পারে।
লোকজনকে কথা বুঝানোর ক্ষেত্রে পরী খুব পটু তাই দিপঙ্করকে বুঝিয়ে উঠতে ওর বেগ পেতে হল না, এবং সাথে সাতে ছোটো মাকেও হাতের মুঠিতে করে নিল।
ওদিকে অরুনার স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মনের ভাব সেই এক, কেউ ওকে কথা বলাতে পারল না বা পুবালির ঘর থেকে বের করতে পারলনা। ব্যানারজি কাকু যখন ওকে জানালেন যে পরী ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় তখন শুধু মাত্র মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অরুনা। সেই ভাবলেশ হীন অভিব্যাক্তি দেখে পরীর হৃদয় কেঁদে ওঠে।
অভি ওর পুরানো বন্ধু সুপ্রতিমদা কে ফোন করে, “এই সুপ্রতিমদা কেমন আছিস?”
সুপ্রতিমদা, “কিরে শয়তান, এত দিন পরে মনে পড়ল। তুই শালা কাজ না থাকলে মনে করিস না। বল এবারে আবার কাকে নিয়ে কোথায় প্লান করেছিস। শালা এবারে যদি দিল্লী এসে উড়ে পালিয়ে যাস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবো না।”
অভি, “নারে ভাই, এত রেগে যাস না। এবারে আমরা সাত জনের একটা গ্রুপ সেই হিমাচলে ঘুরতে যাব ভাবছি। তাই তোকে ফোন করে জানালাম। তুই আমাদের জন্য একটা ছোটো বাসের যোগাড় করে দিতে পারিস? এবারে কারন একটু অন্য ধরনের, এবারে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছি আর তার অবস্থা আমি তোকে পরে জানাব।” অভি সুপ্রতিমদাকে অরুনার পুরো ঘটনা জানাতে, ও রাজি হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে অরুনা, অভি আর পরী প্লেনে করে দিল্লী পৌঁছাবে আর দিপঙ্কর, কল্যাণীরা রাজধানি এক্সপ্রেসে করে দিল্লী পৌঁছে যাবে।
সুপ্রতিমদা দিন তিনেক পরে অভিকে ফোন করে, “শোন ভাই, আরও দুজন যদি তোদের সাথে যেতে চায় তাহলে কি নিবি?”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কে কে যাবে?”
সুপ্রতিমদা হেসে উত্তর দেয়, “আমি আর আমার বান্ধবী।”
সুপ্রতিমদার কথা শুনে অভি অবাক, যে ছেলে শুধু চরে খেত আজ সে ছেলের মুখে অন্য কথা, “তুই জাবি আর আমি না করতে পারি নাকি। তা শেষ পর্যন্ত তুই টেস্ট ম্যাচ খেলার পিচ পেয়েই গেলি বল। তোর বউ কি দেখতে সেক্সি রে?”
সুপ্রতিমদা, “শালা নিজের একটা ব্যাটিং পিচ আছে না সেখানে গিয়ে ব্যাটিং কর না, আমার পিচের কথা তোর জেনে কি হবে।”
অভি, “রেগে যাচ্ছিস কেন রে তুই।”
সুপ্রতিমদা, “আচ্ছা শোন এবারে, আমি একটা ইনোভা ঠিক করেছি আর আমার ত টাটা সাফারি আছে। আমাদের কাছে তাহলে দু দুটো ড্রাইভার থাকবে, আর আমার ড্রাইভার বল্বিন্দারকে ত তুই আগে থেকে চিনিস। এবারে আমি ভাবছি কি যে আমি আর তুই আমার টাটা সাফারিতে আমাদের বউ নিয়ে যাব, বাকিরা ইনোভাতে যাবে। তুই ড্রাইভ করতে জানিস আমিও জানি সুতরাং গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ অসুবিধে হবে না। আর তুই যে সব জায়গার কথা আমাকে শুনালি সেসব জায়গায় আমি কোনদিন যাইনি, রিতিকা ত সব কথা শুনে খুব খুশি। তোর বউয়ের সাথে আমার বউয়ের দেখা হয়ে যাবে।”
অভি, “হুম্মম্ম… তাহলে তোর বউয়ের নাম রিতিকা, বেশ মিষ্টি নাম রে। তা তওর মনের মতন ত?”
সুপ্রতিমদা, “বোকা… এসে দেখে যা একবার। আর শালা একবার যদি কিছু কমেন্ট মেরেছিস রিতিকাকে দেখে তাহলে তোর টা কেটে তোর হাতে ধরিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
অভি, “গুরু বিয়ে হয়নি আর এখন থেকেই এত আগলে রাখছিস।”
সুপ্রতিমদা, “বোকা… ছাড় অসব কথা, এবারে বল কবে দিল্লী আসছিস।”
অভি, “পরের রবিবার, সকালের ফ্লাইট, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স আই.সি.264।”
যাবার দিন কাছে চলে আসে। ব্যাগ গুছানোর পালা প্রায় শেষ। ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া গরম জামাকাপড় নেওয়া হয়। যে জায়গায় যাচ্ছে সেখানে ঠাণ্ডা ভীষণ। অভি পরীকে জিন্স নিতে বলে, পরী প্রথম প্রথম নারাজ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভির কারত মিনতির সামনে হেরে যায়। এরই মাঝে পরী অরুনার বাড়ি গিয়ে ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে আসে, অরুনার মানসিক অবস্থার কনো পরিবর্তন হয় না। অরুনা যেমন চুপ ছিল সেইরকমই আছে, আর সেটাই সবার চিন্তার বিষয়। ব্যানারজি কাকু পরীর ব্যাবহারে ভীষণ খুশি। পরী জানতে চায় যে অভি কি করে অরুনার মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি করাবে, অভির কাছে উত্তর দেবার মতন কোনো পরিকল্পনা থাকে না, শুধু এই টুকু জানায় যে কিছু একটা হয়ে যাবে, হয়ত নতুন জায়গায় গিয়ে বা অচেনা মানুষদের সাথে মিশে অরুনার মানসিক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে অভির ধারনা।
কল্যাণী দীপঙ্কর রা একদিন আগেই ট্রেনে চেপে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।
বাবা আর ব্যানারজি কাকু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে প্লেনের টিকিট এক্সিকিউটিভ ক্লাসে কাটে। যাবার দিন বাড়ির সবাই এয়ারপোর্টে ওদের ছাড়তে এসেছিলেন। অরুনা নিজের খেয়ালেই ছিল, পাথরের পুতুলের মতন নড়াচড়া করছিল। অরুনার মা আর অভির মা দুজনের চোখে জল এসে গেছিল অরুনার অবস্থা দেখে। ব্যানারজি কাকু অভিকে আবার মনে করিয়ে দেন ওর প্রতিজ্ঞার কথা, এবারে অভি হেসে জানায় যে ও ওর কথা রাখবে, এবং অরুনাকে ঠিক করেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
প্লেনে অরুনা আর পরী পাশাপাশি বসে, করিডোরের অন্য দিকে অভি। অরুনা জানালার ধারের সিটে বসে হাতের ওপরে মাথা রেখে একমনে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। পরী একটা সুন্দর সবুজ রঙের সালোয়ার পড়েছিল। পরী প্রথম বার প্লেনে চাপে কিন্তু সেই উৎসাহ ছাপিয়ে ওর মনের ভেতরে অরুনার চিন্তা বেশি করে ভর করে। সকালের খাবার দিয়ে যায় এয়ারহোস্টেস, পরী খাবারের বহর দেখে অভির দিকে তাকায়। অভি ওকে জানায় যে ও এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ভ্রমন করছে। পরী অরুনার দিকে তাকায়, অরুনা ভাবলেশহীন চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে মেঘ দেখতে থাকে। পরী ওর কাঁধ ছুঁয়ে আলতো করে নারা দিতে, অরুনা পরীর দিকে খালি চোখ নিয়ে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে পরীর আত্মা যেন ককিয়ে কেঁদে ওঠে। পরী পাউরুটির এক টুকরো ছিঁড়ে তাতে মাখন লাগিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে ধরে। অরুনা একটু খানি মুখ খুলে মুখের মধ্যে পাউরুটির টুকরো নিয়ে নেয়। পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে চোখের জল সংবরণ করে আরও একটা টুকরো খাওয়াতে যায়।
অরুনার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, “শুচিদি, ঠাণ্ডা লাগছে।”
অরুনার ঠোঁটের ওই তিনটি শব্ধ যেন অভির আর পরীর কানে মধুর মতন মনে হয়। পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মমতাময়ী হৃদয়ের খুশির জল চেপে রাখে। জল ভরা চোখ নিয়ে একবার অভির দিকে তাকায়। অভির দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, এয়ারহোস্টেস কে অনুরধ করে একটা কম্বলের ব্যাবস্থা করে। পরী দুই সিটের মাঝের হাতল উঠিয়ে দিয়ে, অরুনার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। পরীর মমতাময়ী স্পর্শে অরুনার চোখে জল চলে আসে।
দুহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “শুচিদি আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।”
পরী ওর গালে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলে, “অরুনা আমি তোর কাছে আছি। তোর আর ঠাণ্ডা লাগবে না।”
এয়ারহোস্টেস কম্বল দিয়ে গেলে, অভি অরুনার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেয়। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। অরুনা পরীর বুকে মাথা গুঁজে ফুফিয়ে ওঠে, বুকের মাঝের অন্তহীন বেদনা দুগাল বেয়ে বয়ে চলে অবিরাম ধারায়। ওর চোখের জলে পরীর বুক ভিজে যায়, কিন্তু একবারের জন্যেও পরী ওকে কাছছাড়া করে না।
পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি খেয়ে নাও।”
অভি বলে, “ওকে কিছু বলো?”
পরী, “না, ওকে কাঁদতে দাও। ওর ভেতরের সব জমানো ব্যাথা সব দুঃখ চোখের জল হয়ে বেড়িয়ে যাক। তাতে ওর মন অনেক হালকা হবে। যে অরুন্ধতি দিল্লী পৌঁছাবে সেই অরুন্ধতি অনেক বদলে যাবে কোলকাতার অরুন্ধতির থেকে।”
অরুনা কেঁদে কেঁদে শেষ পর্যন্ত পরীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। পরী ওর ঘুমন্ত মাথা কোলের ওপরে নিয়ে আস্তে আস্তে মাথা গালে হাত বুলিয়ে দেয়। অরুনা পরীর কোলে ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ের মতন ঘুমিয়ে থাকে, চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছায়া।
প্লেন ধাক্কা মেরে দিল্লী এয়ারপোর্টে নামে। ঝাঁকুনির জন্য অরুনার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর পরীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগে প্রায় চোখে জল চলে আসে। আঙ্গুল দিয়ে অরুনার গালে জলের দাগ মুছিয়ে দিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। প্লেন থামলে ব্যাগ হাতে নিয়ে নামার উদ্যোগ করে অভি, পেছনে অরুনা আর পরী।
অরুনা অভির কাঁধ আলতো করে ছোঁয়, অভি পেছন দিকে তাকায়। অরুনার ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে, “এই বিহারী আমরা কোথায় যাচ্ছি রে?”
শেষ পর্যন্ত অভির অনুপম দেবী প্রতিমা কথা বলল। অভির বুকের বাঁধ ভেঙ্গে গেল ওর গলার আওয়াজ শুনে। ওর মনে হল যেন হারিয়ে যাওয়া বহুমুল্যবান রত্ন আবার ফিরে পেয়েছে। অরুনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপরে চুমু খায়। অভিকে শান্তনা দেবার জন্য পরী আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।
অরুনার ঠোঁটে আবার হাসি দেখে পরী আর অভি যেন স্বস্তির শ্বাস নেয়। পরীকে পেয়ে অরুনা যেন সেই পুরানো দিন ফিরে পেল। দুজনেই মেতে ওঠে গল্পে, অভি বিশেষ কান দেয় না মেয়েদের গল্পে। পরীকে বলল যে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিরে যে ওরা দিল্লী ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে। পরী জিজ্ঞেস করে যে ব্যানারজি কাকু যদি ওর কথা জিজ্ঞেস করে ত কি উত্তর দেবে পরী, সেই শুনে অভি বলল যে ব্যানারজি কাকু কে বলে দিতে যে ও পরে বাড়িতে ফোন করবে। অভি চলে গেল কনভেয়র বেল্ট থেকে বাকি ব্যাগ নিতে, আর পরী আর অরুনা চলে গেল ফোন করার জন্য। বারবার মাথা ঘুরিয়ে অভি ওদের দিকে লক্ষ্য রাখে যাতে কোথাও হারিয়ে না যায়। অরুনার জন্য এটা প্রথম বার নয় যে ও দিল্লী এসেছে, কিন্তু অরুনার মানসিক অবস্থা এখন সেই পুরান অবস্থায় নেই ও এখন পরীর ওপরে নির্ভর।
ব্যাগ নিয়ে তৈরি অভি, কিছু পরে পরী আর অরুনা ফোন সেরে ওর কাছে চলে আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ও দুই বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি যে অরুনা আবার কথা বলছে। অরুনা পরীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আর অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসে।
অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কাকুর সাথে কথা বলেছিস?”
অরুনা ওকে হেসে উত্তর দেয়, “জানিনা তুই বাবা মা কে কি বলছিস, কিন্তু আমার কথা শুনে ওরা খুব খুশি। শুচিদি ও মায়ের সাথে কথা বলেছে, সবাই তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।”
অভি, “ঠিক আছে, এবারে চল। এতক্ষণে হয়ত রাজধানি এক্সপ্রেস দিল্লী পৌঁছে গেছে আর সুপ্রতিমদাও হয়ত আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে।”
বাইরের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করাতে, পরী ওকে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় যে কি ভাবে অভির সুকৌশল পরিকল্পনায় এই সব সম্ভব হয়েছে। সব কথা শুনে অরুনা অবাক হয়ে যায়।
অরুনা অভির কাছে এসে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “তুই আমার জন্য এত সব করেছিস?”
অভি হেসে ফেলে, ওর মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, “ধুর তোর জন্য করতে যাবো কেন আমি। আমি তিন জনের কাছে তিনটে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য এই সব পরিকল্পনা।”
পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল করে অভির দিকে একটা চুম্বন ছুঁড়ে দেয়। অরুনা তর্জনী দিয়ে চোখের কোল মুছে পরীর হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষণিকের জন্যেও যেন ও পরীকে কাছ ছাড়া করতে চায় না।
ওরা বাইরে বেড়িয়ে দেখল যে সুপ্রতিমদা একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে, ওদের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটির বেশ সুন্দরী দেখতে, পরনে সাদা জিন্স আর বাদামি রঙের টপ, গায়ের সাথে এটে আসে পরনের পোশাক। শরীরের প্রতিটি বাঁক পোশাকের নিচে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। চুল ঘাড় পর্যন্ত, মাথার পেছনে বাঁধা একটা ছোট্ট পনি টেলের মতন। চোখ মুখ বেশ মিষ্টি, কালো কালো চোখ দুটি একটু ছোটো, পরীর মতন অচ বড় নয় কিন্তু বেশ চঞ্চল। অভি দেখে মৃদু হেসে দেয়, এটা হয়ত দিল্লীর ফ্যাসান। অভি একবার পরী আর মেয়েটিকে মনে মনে তুলনা করে কে বেশি সুন্দরী, কিন্তু অভির মনের ভেতরে পরীর বাস, তাই আর বেশি কিছু ভাবতে পারল না অভি।
সুপ্রতিমদা ওদের কে দেখে অভির দিকে এগিয়ে এসে হাত মেলায়। পরী আর অরুনা উৎসুক চোখে সুপ্রতিমদাকে দেখে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে দুটি মেয়ে কে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “এর মধ্যে কে শুচিস্মিতা?”
পরী আর অরুনা দুজনেই ওর প্রশ্ন শুনে হেসে ফেল। অভি হেসে কিছু উত্তর না দিয়ে সুন্দরী মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, “আমি অভিমন্যু তালুকদার আর তুমি নিশ্চয় রিতিকা চতুর্বেদী।”
রিতিকা হেসে বলে, “হ্যাঁ আমি জানি তোমাদের কথা। আমি ওর কাছে থেকে তোমাদের হস্টেলের কথা অনেক শুনেছি। গত বার তুমি দিল্লী এসেই পালিয়ে গেলে দেখা না করে। ও আমাকে বলেছে যে তুমি নাকি তোমার বান্ধবীকে নিয়ে একা একা কোন এক দুর্গম পাহাড়ি জায়গায় বেড়াতে গেছিলে। হুম তুমি শুধু মাত্র সাহসী বললে ভুল হবে তুমি দুঃসাহসী ছেলে। এবারে বলত এদের মধ্যে কে শুচিস্মিতা?”
অভি পরীদের দিকে হেসে রিতিকাকে উত্তর দেয়, “আন্দাজ করো, তবে তোমার কাছে একটাই সুযোগ।”
রিতিকা পরীকে দেখিয়ে বলে অভির দিকে হেসে বলে, “ওই যে সবুজ রঙের সালোয়ার পরে আছে সেই শুচিস্মিতা।”
রিতিকা এগিয়ে যায় পরীর দিকে। তিন জনে মেয়ে এসে অপরকে সংবর্ধনা জানিয়ে মিশে যায়। মেয়েদের নিজেদের মধ্যে মিশতে বেশি সময় লাগেনা আর ওদের গল্প শুরু হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে হেরে যাওয়ার হাসি দেয়। অরুনার চেহারায় পুরান হাসি দেখে পরী একবার অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে, মাথা নাড়ায়।
সুপ্রতিমদার গাড়ি চেপে ওরা সবাই সি.আর.পার্কের ওর বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করল। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছে আর অভি পাশে বসে, মাঝখানের সিটে বসে তিন জন মেয়ে যেন পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছে।
সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে আমরা কখন দিল্লী থেকে রওনা দেব?”
অভি সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, “আরে তুই নিউ দিল্লী রেলস্টেসানে কাউকে পাঠিয়েছিস কল্যাণীদের বাড়ি আনার জন্য।”
সুপ্রতিমদা, “হ্যাঁ রে বাবা, বল্বিন্দার ওদের আনতে চলে গেছে। আমি ওর হাতে একটা প্লাকারডে দিপঙ্করের নাম লিখে দিয়েছি, খুঁজতে কোন অসুবিধে হবে না।”
অভি, “ভাবছিলাম ত যে দুপুরে খাওয়ার পড়েই বেড়িয়ে পড়ব কিন্তু এখন ভাবছি কিছু তাবু আর বাকি সরঞ্জাম নিয়ে গেলে হয়।”
সুপ্রতিমদা আঁতকে ওঠে, “শয়তান ছেলে, আগে বলতে পারিস না। বোকা… এখন দুপুরে কি করে হবে?”
অভি, “না না দুপুরে নয়, রাতে বের হব আমরা। এদের বাড়িতে রেখে, আমি আর তুই টেন্টের খোঁজে বের হয়ে যাব।”
সুপ্রতিমদা, “হটাত করে তোর মাথার প্লান বদলে কেন গেল।”
অভি পিছনে ঘুরে একবার অরুনার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “অরুনা যখন প্লেনে উঠেছিল তখন ওর মানসিক অবস্থা এখন যা দেখছিস তখন এই রকম ছিলনা। ওকে হাসতে দেখে আমি ভাবলাম কি আছে আবার কবে যাওয়া হবে ঠিক নেই, চল কাম্পিং করে আসি।”
সুপ্রতিমদা, “এখানে কেউ কিন্তু কাম্পিং করতে জানে না।”
অভির মুখে কাম্পিঙ্গের কথা শুনে পরী আর রিতিকা পেছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, “এটা কি রকম হল? আগে থেকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই, হটাত করে তোমরা সব প্লান বদলে দেবে কি করে হবে, আমরা খেলবো না।”
অভি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে দেখে বলে, “আরে ভদ্রমহিলা, ঘুরতে গিয়ে যদি কিছু আডভেঞ্চার না হয় তাহলে মজা কি?”
রিতিকা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে। পরী ওকে পুর পরিকল্পনা জানায় আর জায়গার বিবরন দেয়। পরীর নাকো পর্যন্ত ঘোরা তাই সেই পাহাড়ের বিবরন দিতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পরীর মুখে স্পিতির গল্প শুনে অরুনা আর রিতিকা দুজনেই খুব উত্তেজত হয়ে ওঠে।
সুপ্রতিমদার বাড়িতে কল্যানিরা আগেই পৌঁছে যায়, পরী গাড়ি থেকে নেমে ওদের দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কল্যাণীকে। বাড়িতে পাঁচটা মেয়ে যেন গল্পে মেতে ওঠে, ওদের দেখে মনে হল যেন একদল সুন্দরী পাখি একসাথে বসে কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে। খাওয়ার পরে অভি দীপঙ্কর আর রামানুজ কে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে অনুরধ করে ওরা দুজনে বেড়িয়ে যায় কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম ভাড়া করতে।
কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম যোগাড় করতে করতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যায়। দুটি বড় টেন্ট নেওয়া হয় আর একটা ছোটো টেন্ট নেওয়া হয়, সাথে নেওয়া হয় স্লিপিং ব্যাগ, দড়ি, মাদুর ইত্যাদি। সরঞ্জাম গাড়ির পেছনে রেখে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।
অভি, “বস, একটু ওষুধের দোকানে দাঁড়াতে হবে আর বেশ কিছু সিগারেট কিনতে হবে।”
ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে “বোকা… না নিয়েই বেড়িয়ে পরেছিস?”
অভি হেসে ফেলে, “শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।”
সুপ্রতিমদা, “আবে শুয়র, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।”
অভি, “বোকা… মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।” দুজনেই হেসে ফেলে।
সুপ্রতিমদা, “তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।”
অভি, “নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।”
সুপ্রতিমদা, “তোর ত শালা ওখানে মাথা, সুন্দরী কে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।”
অভি, “রিতিকাকে কোথায় পেলি?”
সুপ্রতিমদা, “আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেন্সান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।”
ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্লাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্ত রঙের প্রলেপের মতন সেটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আর চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে।
অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুর পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।
পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।”
সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, “রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছও? এর পরে ত সপ্তপদি বাকি আছে, তখন কি করবে?”
লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, “ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।”
গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বল্বিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে।
অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?”
পরী ওকে গত বারের কথা জানায়।
অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?”
দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।
সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, “আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।” তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।”
সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, “বোকা…শূয়র, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।”
অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?”
পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়।
কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, “বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানারজি কাকু কে কি বলবে কিছু ভেবেছ কি?” পরীর ধরা গোল শুনে অভির ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, “আমার জানো, মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।”
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।”
অরুনা পরীকে বেড়িয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণী কে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?”
অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, “তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।”
রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাত টুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বল্বিন্দার ওদের গাড়ি চালায়।
অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পরতেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বল্বিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।
অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, “আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?”
অভি, “তোর ঘুম পাচ্ছে ত এখানে ঘুমিয়ে পর না।”
অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।”
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আস্তে বলব খানে।”
বল্বিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেলল। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে।
পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, “আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।”
পরী গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।
অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।
সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হল যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে।
দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেড়িয়ে পরে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাটা যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?”
অভি, “না এবারে নয়, কল্পা বাঁ রেকং পিও পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।”
পরী, “ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?”
অভি, “বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।”
পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, “কেন সময় কম, আমাদের হাতে ত অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।”
কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, “তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?”
পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, “না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করব না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা, অভি।”
সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?”
পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।” পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে।
রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, “কিন্তু চিতকুল ত আমাদের পথে ছিলে না, তাহলে?”
পরী, “কেন তোমরা ছেলেরাই ত বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।”
অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?”
পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, “ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।”
পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা।
গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল।
অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?”
অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপ্পজন্নক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে ত মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।”
সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে।
পরীকে বলে, “তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছ, সোনা?”
পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লালা ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, “আমার একটা কথা রাখবে না, সোনা?”
অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, “এটা কিন্তু ব্লাকমেইল করা হচ্ছে বেবি।”
অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, “আমরা চিতকুল যাচ্ছি।”
বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, “ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, সোনা।”
গাড়িতে উঠে অভি, চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে টাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাই কে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে।
রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এল। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকাল, পরী হেসে ওকে আসস্থ দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা।
সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।”
অভি, “এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?” সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে।
বল্বিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিন্তে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।
লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#02)
সবার মুখে একই কথা, ঠিক জায়গায় এনেছেত ওদের? হোটেলের বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোথাও আলোর চিহ্ণ মাত্র নেই, কিছুই দেখা যায় না, চারদিকে শুধু উঁচু উঁচু কালো পাহাড় আর দুরে কয়েকটা ছোটো ছোটো কুঁড়ে ঘরের থেকে আসা আলো। রানী আর কল্যাণী অভিকে জিজ্ঞেস করে যে ও ঠিক জায়গায় এসেছে কিনা। পরী ম্যানেজারের সাথে রুম নিয়ে দরদাম করছিল, ওদের কথা শুনে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। সেই হাসে অভিকে নিয়ে যায় পুরানো স্মৃতিতে, পরীর মুখেও গতবার সেই একি প্রশ্ন ছিল। অভি কল্যাণীকে অভয় দিয়ে বলে, সকাল হলেই বুঝতে পারবে জায়গার আসল মর্ম। রাতের খাওয়া একটু দেরি করেই শেষ হয়। অরুনার জন্য আলাদা রুম নেওয়া হয়, পরী তাতে একটু চিন্তিত।
পরী অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে একা শুতে পারবি ত?”
অরুনা হেসে উত্তর দেয়, “ঠিক পারব, আমি আর কচি খুকি নই।”
পরী অরুনাকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে চাদর টেনে দেয়। অরুনা চোখ বন্ধ না করা পর্যন্ত পরী ওর পাশে বসে থাকে। অরুনা ঘুমিয়ে পড়ার পরে পরী আর অভি নিজেদের রুমে চলে আসে।
অভি কাপড় বদলে নিয়ে বিছানার ওপরে ডায়রি খুলে বসে পরে সারা দিনের খরচ খরচা লেখার জন্য। পরী জামা কাপড় বদলে নেবার জন্য বাথরুমে ঢুকে পরে। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে আর ওকে দেখে অভির সব অঙ্ক গুলিয়ে যায়।
পরী ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “মনে আছে প্রথম রাতের কথা আর প্রথম ঝগড়া।”
অভির মুখ হাঁ, পরীর পরনে গোলাপি রঙের পাতলা রাত্রিবাস। যদিও পরনের কাপড় গোড়ালি পর্যন্ত কিন্তু ওর কাঁধ অনাবৃত আর ওর পেলব দেহের সাথে লেপটে থাকে কাপড়। প্রেয়সীর শরীরের প্রত্যেক বাঁক ওর লুব্ধ চোখের সামনে উন্মুক্ত যেন, উন্নত বক্ষের মাঝে ছোটো নুড়ি পাথর শোভা পায়। সুগোল বক্ষ জোড়া যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। বক্ষ বিভাজনের অধিকাংশ অনাবৃত আর ঘরের মৃদু আল যেন ফর্সা মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে যাচ্ছে। দু বাহু আর কাঁধ অনাবৃত, মাথার চুল খোলা, ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি। পীনোন্নত বক্ষ যুগলের পরে দেহের আকার পাতলা হয়ে নেমে আসে নরম গোল পেট, তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ পরিষ্কার বোঝা যায়, পাতলা আভরনের নিচে। গোল পেটের নিচে তোলপেট একটু ফুলে উঠে বেঁকে নেমে যায় জানুসন্ধির দিকে। অভির চোখ আটকে যায় জানুসন্ধির দিকে, দুই জানু যেন মসৃণ গাছের গুঁড়ি। পরী আয়নার সামনে বসে পরে, অভির দিকে তাকায় আর হাসে। অভির মাথার সব অঙ্ক গুলিয়ে যায় পরীর অপরূপ ভুগলের সামনে। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে ওঠে, পরীর নজর চলে যায় ঢেকে থাকা কঠিন সিংহের দিকে। গাল লাল হয়ে ওঠে পরীর, রাতের কথা ভেবে। বুকের মাঝে উত্তাল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু হয়। অভি পাগল হয়ে যায় দেখে যে পরীর ওই রাত্রিবাসের নিচে কোন অন্তর্বাস নেই।
মধু ঢালা সুরে অভির দিকে চোরা চাহনি দিয়ে বলে, “ওখানে বসে বসেই কি আমাকে মেরে ফেলবে? কিছু কি বলবে না?”
পরীর গলার সুর শুনে সম্বিৎ ফেরে অভির, “উফ, তুমি না একদম রসে ভরা, পরী। আমি ত আজ রাতে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মরেই যাব।”
পরী লাজুক হেসে বলে, “মনে আছে সেই রাতে ঝগড়ার কথা।”
অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “রাতের ঝগড়ার কথা ত মনে নেই কিন্তু সকালের সেই মিলনের ছবি আমার বুকে আঁকা আছে।”
বিছানার একদিকে সরে গিয়ে পরীর ঠিক পেছনে এসে বসে অভি। পা ফাঁক করে পরীকে নিজের কোলের ওপরে টেনে নেয়। পরীর কোমল নিতম্ব অভির জানুর ভেতরের দিকে স্পর্শ করে, অভি জানু চেপে ধরে পরীর দুপাসে। কোমরের দুপাসে হাত দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে চেপে ধরে হাত। নরম পেটে অভির হাতে গলে যায়। অভি ওর ডান কাঁধে মাথা রেখে গালে গাল ঘষে। পরী আয়নায় নিজেদের আলিঙ্গন দেখে আবেগে কেঁপে ওঠে, চোখে চোখ রেখে পরী মিসিত হাসি দেয় অভির দিকে।
চুল আঁচড়ানোর পরে সামনে ঝুঁকে ক্রিম নেয় হাতে মাখার জন্য, আর পরীর ঝকার ফলে ওর সুগোল নিতম্বের নিচে পিষে যায় অভির সিংহ। পরী ওর কোমল নিতম্বের খাঁজে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে কামনার আগুনে মৃদু কেঁপে ওঠে। কোমরে মোচর দেয় আর তাঁর ফলে অভির সিংহ গেঁথে যায় ওই দুই কোমল নিতম্বের খাঁজে। পরী আর যেন থাকতে পারে না, সারা শরীরে কামনার আগুন ধিকধিক করে জ্বলে ওঠে। অভির তপ্ত শ্বাস ওকে পুড়িয়ে দেয় আর নিচে চেপে থাকা তপ্ত শলাকা ওর শরীরে যেন ফস্কা ফেলে দেয়। অভি আয়নায় ওর চোখের দিকে কামনার আগুন নিয়ে তাকায়।
পরী ওর চোখে কামনার আগুন দেখে আর পিছিয়ে থাকতে না পেরে বলে, “এত তাড়াহুড়ো কেন করছ? আমাকে লোসান লাগাতে দাও তারপরে আমি তোমার।”
অভির হাত উঠে আসে পরীর উন্নত বক্ষের নিচে, আলতো করে চাপ দেয় বুকের নিচের ভাঁজ। গালে গাল ঘষে অভি, উষ্ণ ত্বকের ঘর্ষণের ফলে প্রেমের আগুনের ফুল্কি ছুটতে দেরি হয় না। গাল লাল হয়ে যায় পরীর।
অভি ওর কানে কানে বলে, “লোসান লাগিয়ে কি করবে? আমি ত আজ তোমার সারা শরীরে চুমু খাব, বেবি।”
পরী মৃদু রাগ ব্যাক্ত করে বলে, “শয়তান ছেলে, আমি তোমাকে আমার ঠোঁট আর গাল ছাড়া কোথাও চুমু খেতে দেব না। ভুলেও ভেব না যে তুমি যেটা করতে চাইছ সেটা পেয়ে যাবে।”
অভির লিপ্সা আরও বেড়ে যায়, আঙ্গুল দিয়ে চাপ দেয় পরীর বুকের নিচের বাকে। কাঁধের ওপরে থেকে সামনে ঝুঁকে বুকের মাঝের গভীর খাঁজ দেখে পাগল হয়ে যায় অভি। অপরূপ বক্ষ বিভাজন যেন উপচে পড়ছে পরনের জামার ওপর থেকে। কামনাতারিত অভির চোখের সামনে দোল খায় পরীর বক্ষ। আরও জোরে দুবাহু মাঝে পরীর দেহ চেপে ধরে টেনে নেয় যেন এবারে নিজের দেহের সাথে মিলিয়ে নেবে ওর মাখনের মতন নরম শরীর। সিংহ এবারে নিজের জানান দেয় আর নিতম্ব বিভাজনের মাঝে আটকে যায়। ওদের সারা শরীরে কামনার আগুন কিলবিল করতে শুরু করে দেয়। অভির ডান হাত নিচে নেমে যায় তলপেটের ওপরে, মৃদু চেপে ধরে নরম তুলতুলে তলপেটের মাংস। শ্বাসের গতি বেড়ে যায় আর পরীর উন্নত বুক জোড়া সাগরের ঢেউয়ের মতন ওঠা নামা করে।
পরী ওর খোলা পিঠের ওপরে অভির পেশি বহুল নগ্ন ছাতির পরশ অনুভব করে। ভুলে যায় হাতে পায়ে লোসান লাগাতে। পীনোন্নত বুক জোড়া উপচে প্রায় বেড়িয়ে আসে রাত্রিবাসের ওপরের দিক থেকে। মাথা পেছিন দিকে হেলিয়ে অভির গালে গাল ঘষতে শুরু করে। দুহাত পেছনে এনে, অভির মাথার পেছনে নিয়ে চুল মুঠি করে ধরে নেয়। ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করা আর সেই ফাকের ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাসের ঝড় বয়। অভি বাম হাতে পরীর এক বক্ষ নিয়ে আলত আলতো চাপ দেয়া শুরু করে, অন্য হাতে পরীর তলপেটে ওপরে ঠিক জানু সন্ধির কাছে চেপে ধরে। প্রেমের তপ্ত আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে ককিয়ে ওঠে পরী।
অভি ওর ডান কানের লতি ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয়। অভি মনপ্রানে চায় যে আজ রাতে প্রেয়সীর উন্মুক্ত যৌবন সুধা চোখ দিয়ে পান করবে আর পরী যখন আলো বন্ধ করতে বলেনি তাহলে পরীর মনেও সেই ইচ্ছে আছে যে অভি ওর রুপশুধা দেখুক দুচোখ ভরে। বুভুক্ষু অভি চেপে ধরে পরীর নরম তুলতুলে বুক, পিষে দেয় নারী মাংস কঠিন থাবার মাঝে। অন্য হাত পৌঁছে যায় নারীতের দোরগোড়ায়, আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দেয় সেই গুহার ওপরে।
পরী শক্ত করে চোখ বন্ধ করে শীৎকার করে ওঠে। অভি ফিসফিস করে পরীকে অনুরোধ করে, “সোনা আমার একটা কথা রাখবে?”
পরী থাকতে না পেরে মৃদু সুরে বলে, “তোমার কোন কথা আমি রাখিনি সোনা।”
অভি আঙ্গুল নিয়ে যায় পরীর জানুর মাঝে আর আলতো করে চাপ দিয়ে বলে, “এখানের বাগান ছেটে ফেল, সোনা।”
পরী মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, “না আআআআআ…… শয়তান ছেলে কোথাকার।”পরী দুজানু চেপে ধরে যাতে অভি আর ওর জানু মাঝে আঙ্গুল দিয়ে খেলা করতে না পারে। পরীর কোমল নিতম্বের চাপে অভির সিংহের অবস্থা যায়যায়। তলপেটে থেকে আগুন নিচে নেমে, বারে বারে গর্জে ওঠে সিংহ।
অভি জিজ্ঞেস করে, “কেনো বেবি?”
পরী, “কেন মানে? এইসব কেউ করে নাকি?”
অভি, “কে বলছে যে এইসব করে না?”
পরী, “তুমি জানলে কি করে, যে মেয়েরা করে।”
অভি, “আমি ছবিতে আর অইসব সিনেমাতে দেখেছি।”
লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরী, “ছাড়ো আমাকে, তুমি ভীষণ শয়তান।”
পরীকে আরও আঁকড়ে ধরে অভি, আর বারংবার দেহের মোচরের ফলে অভির সিংহ বারেবারে নিতম্বের খাঁজের মাঝে ঘর্ষণ খায়।
ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। থতমত খেয়ে ওঠে অভি আর পরী। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অভির আলঙ্গন থেকে মুক্ত করে উঠে বসে। কাপড় আর অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে নেয়। অভি কোনোরকমে মাথা উঠিয়ে থাকা সিংহ টিকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরী ওর দিকে একটা তোয়ালে ছুঁড়ে দেয় নিজেকে ঢাকার জন্য। অভি পরীর দিকে পরাজিত প্রেমিকের মতন তাকিয়ে হাসে, পরী ওর দিকে দুষ্টু হেসে ইশারা করে, তোমার যেমন শয়তানি ইচ্ছে, ঠিক হয়েছে এবারে।
অভি শ্বাস সামলে আর নিজেকে ঢেকে পরীকে প্রশ্ন করে, “এত রাতে কে হতে পারে?”
পরী গায় একটা ওড়না জড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়, “অরুনা হতে পারে না কেননা আমি ওকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে এসেছিলাম।”
অভি কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে যায় সামনে অরুনাকে দেখে। ওর দুচোখ জলে ভরা লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। সারা মুখ থমথমে, বুকের ভেতরে যেন এক ঝড় বইছে। পরী ওর থমথমে মুখ দেখে অভিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে অরুনাকে ঘরের মধ্যে টেনে নেয়।
জিজ্ঞেস করে অরুনাকে, “কি হয়েছে তোর?”
পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে অরুনার, “তোমার কাছে শুতে দেবে, শুচিদি?”
পরী অভির দিকে হতাশার চাহনি দিয়ে মৃদু হাসে, অভি বোকার মতন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকায়। অরুনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে কম্বল্টা ভাল করে টেনে দেয়। অভির দিকে ফিরে একটা শার্ট হাতে দিয়ে অনুরধ করে যে অরুনার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে।
অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আসবে?”
পরী ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “আগে অরুনার অবস্থা দেখি তারপরে ভেবে দেখব, সোনা।”
অরুনা ওদের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে ছিল, কাঁপা গলায় পরীকে বলে, “আমি জানি আমি তোমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলছি, কেন তুমি আমাকে তোমাদের সাথে এনেছ? আমাকে না আনলেই পারতে।”
পরী ওর পাশে বসে আদর করে গালে চাঁটি মেরে বলে, “একদম এই সব কথা বলবি না।”
অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “দাঁড়িয়ে আছো কেন, যাও।”
বুকের মাঝে একটু হতাশা নিয়ে ম্লান হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল অভি। ভাবছে যে, একটা সিগারেটের সাথে এক ক্যান বিয়ার হলে ভাল হত।সুপ্রতিমদার রুমের দরজায় টোকা মারল অভি। কিছু পরে সুপ্রতিমদা দরজা খোলে, ওর অবস্থা অভির মতন, ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি, কোমরে তোয়ালে জড়ানো, তোয়ালের নিচ থেকে সিংহ বাবাজি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের মধ্যে ইচ্ছে করেই উঁকি মারে অভি, লক্ষ্য করল যে রিতিকা কম্বলে নিজেকে নাক পর্যন্ত ঢেকে নিয়েছে। মাথার চুল অবিনস্ত, চোখ জোড়া প্রেমের আগুনে চিকচিক করছে, গাল লাল।
অভি দেঁতো হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল, “তোদের কি ডিস্টার্ব করে দিলাম নাকি?”
সুপ্রতিমদা ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা… শুয়োর, কুত্তা হারামি, রাত দেড়টায় দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করছিস যে ডিস্টারব করলাম নাকি? শালা তোর কি চাই এত রাতে?”
রিতিকা ওদিকে ফিকফিক করে হাসছে, সুপ্রতিমদার রাগ দেখে আর অভির অবস্থা দেখে।
মাথা চুলকায় অভি, “না মানে…”
সুপ্রতিমদা, “বোকা… মানে কি… তোর কি কন্ডম চাই?”
অভি, “না রে বোকা…, আমার বিয়ার চাই।”
সুপ্রতিমদা, “বিয়ারের ক্যারেট গাড়িতে।”
অভি, “তাহলে গাড়ির চাবি দে।”
সুপ্রতিমদা, “গাড়ির চাবি বলবিন্দারের কাছে। বোকা… এখন যা এখান থেকে আর আমাদের একটু শান্তিতে শুতে দে।”
অভি মুখ বাড়িয়ে রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, “ডারলিং, তোমার রাতের ঘুম হয়ে গেছে।”
অভির মুখে ওই কথা শুনে রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে কম্বলের নিচে মুখ ঢেকে নেয়।
সুপ্রতিমদা অভির ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা… এখান থেকে যা না হলে মেরে ফেলব তোকে।”
বল্বিন্দারে কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে এক ক্যান বিয়ার নিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে গেল। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল আর এক হাতে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিতে থাকে। পরীর জন্য অধির অপেক্ষায় সময় যেন আর কাটেনা। বেশ খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও যখন দেখে যে পরী আর আসেনা, তখন রুম থেকে বেড়িয়ে পরীর রুমে যায়। রুমের দরজা আলতো করে ভেজান দেখে দরজা ঠেলে ঢুকে পরে রুমের মধ্যে।
বিছানায় একটা কম্বলের নিচে পরী শুয়ে আর একটা কম্বলের নিচে অরুনা। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর অরুনা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে শান্তির নিদ্রা জাপন করছে। অরুনা পরীর বুকের কাছের জামা শক্ত করে মুঠিতে ধরে যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় সেই ভয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে পরীর রাত্রিবাস। অভি দুজনার মুখের দিকে তাকাল, পরীর স্নেহময়ি মূর্তি দেখে মন অনাবিল আনন্দে ভরে গেল। পরীর মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে গালে একটা ছোট্ট চুমু খেলা আর অরুনার মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দিল। দরজা বন্ধ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে শুয়ে পড়ল অভি।
পরের দিনের বেশির ভাগ সময়ে সবাই চিতকুল ঘুরেই কাটিয়ে দেয়। সকালে খেতে বসে কল্যাণী আর রিতিকা অভিকে প্রশ্ন করে যে কি ভাবে ও এই জায়গার কথা জানে, তাঁর উত্তরে অভি জানায় যে বেশ কিছু বই আর ম্যাপ পড়াশুনা করে ও এই জায়গার কথা জেনেছে।
অরুনার গলায় মৃদু রাগ, “এটাকে সাহসী বলে না বুঝলি, এটা পাগলামি, শুচিদিকে নিয়ে এই রকম একটা জায়গায় আসা। এই জায়গা ত মনে হয় পৃথিবী থেকে বাইরে।”
পরী সবার দিকে হেসে বলে, “আর এই জন্যেই প্রথম রাতে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল।”
অভি পরীকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, “আরে পরেরদিন সকালে কি হয়েছিল?”
পরী লাজুক হেসে অভিকে আদর করে চাঁটি মারে। ওর মুখের লালিমা দেখে কারুর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে সকালের কি ঘটেছিল।
তাও রিতিকা পরীকে ছাড়ে না, জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, কি হয়েছিল পরেরদিন সকাল বেলায়, শুনি।”
পরী অভির দিকে তাকিয়ে নিচু সুরে বলে, “নাও এবারে ম্যাও সামলাও…”
অভি রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, “ডারলিং, কাল রাতে তুমি যা করছিলে, সেটাই ওর সাথে সেদিন রাতে হয়েছিল।”
রিতিকার গাল লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়, খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে যেন ফাঁক খোঁজে একটু মুখ লুকানোর জন্য।
সকালের খাওয়ার পর্ব শেষে, পরী মেয়েদের নিয়ে বিয়াস নদীর দিকে যায়। ছেলেরা হোটেলের সামনের ফাঁকা জায়গায় বসে চারপাশের পাহাড় দেখে আর সিগারেট টানতে টানতে গল্প করে। হোটেলের সামনে থেকে নদীর তীর বেশ পরিশাক্র দেখা যায়, দূর থেকে লক্ষ্য করে যে মেয়েরা বেশ মজা করছে। সুপ্রতিমদা আর দীপঙ্কর অভিকে পরবর্তী জায়গার কথা জিজ্ঞেস করে। অভি জানায় যে পরবর্তী স্থান, নাকো। আগামিকাল সকাল সকাল ওদের বেড়িয়ে পড়তে হবে তবেই রাতের আগে নাকোতে পৌঁছে যাবে ওরা। মেয়েরা বেশ খানিখন পরে নদীর ধার থেকে ঘুরে হোটেলে ফিরে আসে।
দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী অভিকে বলে, “গ্রীষ্ম কালে পাহাড় আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, চারদিক সবুজে ঢাকা, শিতকালের চেয়ে একদম আলাদা সৌন্দর্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ যে আমাকে দুই ঋতুতেই এখানে এনেছ।”
অভি, “সব তোমার জন্য হানি, তোমার সেই অদৃশ্য চিঠি না পেলে এখানে কোনদিন আসা হতনা।”
অরুনা ওদের কথাবার্তা শুনে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অদৃশ্য চিঠি? সেটা কি?”
অভি ওকে সেই চিঠির কথা বলে আর এই জায়গার আসার সেই পরিকল্পনার গল্প বলে। অভি মজা করে বলে যে ওর হবু বউয়ের শিখিয়ত্রি না হয়ে গোয়েন্দা হওয়া উচিত।
বিকেলে হোটেলের ম্যানেজার অভিদের জিজ্ঞেস করে যে রাতে বনফায়ার করতে চাই কিনা। বনফায়ারের কথা শুনে পরী আর রিতিকার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, এক কথায় সব মেয়েরাই নেচে ওঠে রাতের বনফায়ারের কথা শুনে। রাতে বনফায়ারের চারপাশে গোল করে সবাই বসে, মাঝে কাঠের আগুন জ্বলছে। পরী চেয়ারে বসে, ওর পায়ের কাছে অভি বসে ওর কোলে মাথা রেখে। পরী অভির চুলে আদর করে দেয়। পরীর একপাসে অরুনা অন্য পাশে রিতিকা। রিতিকার পায়ের কাছে সুপ্রতিমদা বসে ওর কোলে মাথা রেখে। অরুনার দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় অভি, অরুনার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, আবার সেই পুরানো অরুনাকে দেখতে পেয়ে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে। অভি নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে আগুনের লাল হলদে আলোয় আলোকিত অরুনার হাসিহাসি মুখের দিকে। পরী অভির দৃষ্টি অনুসরন করে অরুনার দিকে তাকায়।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অরুনা এখন অনেকটা ভাল আছে। তবে আরও কিছু সময় লাগবে ওর মনের অবস্থা ঠিক হতে, চিন্তা করোনা ধিরে ধিরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
পরীর কোলের ওপরে মুখ ঘষে বলে, “সত্যি তোমাকে যে কি করে ধন্যবাদ জানাবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।”
অভির চুলে বিলি কেটে বলে, “আমাকে কেন ধন্যবাদ জানাবে? তোমার কষ্ট কি আমার কষ্ট নয়?”
অভি মুখ তুলে ওর গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে কি আজ রাতে আমরা সেলিব্রেট করছি?”
চুলের মাঝে আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, “না হানি, এখন ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নয়। তোমার চেয়ে আমাকে ওর বেশি দরকার, একটু বুঝতে চেষ্টা করো সোনা।”
অরুনা ওদের কথা শুনে ফেলে জিজ্ঞেস করে, “এই তোরা কি বলছিস রে?”
পরী আদর করে ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, “কিছু না, তুই আনন্দ কর, আমরা একটু আসছি।”
পরী অভিকে টেনে তুলে হোটেলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলে, “গতকাল রাতে, অরুনা পুবালিকে স্বপ্নে দেখে যে ও ডাকছে। ভয়ে আঁতকে ওঠে ও, আর সেইজন্য আর ঘুম আসেনা। কাল অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছিল, আমাকে একদম ছাড়ছিল না। অনেকক্ষণ ধরে ওকে আমি শান্তনা দেই আর বুঝাই, তবে গিয়ে ওর চোখে ঘুম আসে। এমত অবস্থায় কি করে ওকে আমি একা ফেলে দেই বল?”
অভি পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সারা চেহারায় যেন এক মাতৃময়ি রুপের আলক ছটা বিচ্ছুরিত হয়। রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে যায়, কারন সকাল সকাল উঠে বেড়িয়ে পড়তে হবে নাকোর দিকে। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকে যায়। দরজা বন্ধ করার আগে অভির দিকে আদর করে ম্লান হেসে বলে, “ব্যাস আর কিছু দিন হানি। তোমার ওর বেশি জরুরি আমাকে কাছে পাওয়া। আমি জানি তুমি বুঝে নেবে।” অভি বুকের কাছে হাত এনে চেপে ধরে জিজ্ঞেস কর, “তুমি কে? তুমি কোন সময়ে স্নেহময়ি মাতৃ মূর্তি আবার কোন সময়ে আমার প্রেয়সী সুন্দরী। কি করে তুমি এত রুপ ধারন করো?”
পরীর গালে আদর করে অভি, “আই লাভ ইউ।”
পরী ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে, “মনে আছে তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে এই পাহাড়ের মাঝে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানয়ে দেবে।”
মাথা নাড়ায় অভি, ওর সেসব কথা বেশ ভালো করে মনে আছে।
পরদিন সকাল আট’টার মধ্যে খাওয়া সেরে অভিরা বেড়িয়ে পরে নাকোর উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক সুপ্রতিমদা, পাশে বসে ওর প্রেয়সী, রিতিকা। অভি পরী আর অরুনা পেছনে বসে। একসময়ে রিতিকা সুপ্রতিমদার কল ঘেঁসে বসে গালে আলত করে চুমু খায়।
অভি সেই দেখে রিতিকাকে খেপিয়ে বলে, “রিতু ডার্লিং, সুপ্রতিমদার গিয়ার বদলাতে যেও না।”
সুপ্রতিমদা চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা… চুপচাপ পেছনে বসে থাক।”
গালাগালি শুনে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পরী ভাবতেই পারেনি ওদের মুখ থেকে এইরকম সব গালাগালি বের হবে। রিতিকার মুখ লাল হয়ে যায় লজ্জায়, সুপ্রতিমদার কাছ থেকে সরে, লজ্জা লুকাতে জানালার বাইরে দেখে।
পোয়ারিতে থামে গাড়িতে তেল ভরানর জন্য। ইনোভা ওদের গাড়ির ঠক সামনে। রেকংপিও পার হবার পরেই পাহাড়ের রঙ বদলাতে শুরু করে। এতক্ষণ দুপাশে সবুজ ঘাসে বাঁ গাছে ঢাকা পাহাড় ছিল, পিওর পরে পাহাড়ের রঙ হয়ে যায় ধুসর। ব্রিজ পার হবার পরেই চারপাশে ন্যাড়া পাহাড়, কোথাও ঝুরঝুরে পাথর রাস্তার ওপরে পরে। সুপ্রতিমদার গাড়ি চালাতে একটু অসুবিধে হচ্ছিল, এবড়খাবর রাস্তার ওপরে গাড়ি যেন ঢেউয়ের মতন দোল খায়। শতদ্রু নদী রাস্তার একপাশ দিয়ে নিজের মনে বয়ে চলে। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে বসে, অভি একহাতে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। অরুনা চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর কঠিন সৌন্দর্য দেখে।
অরুনা কিছু পরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে একটা কথা বলবি আমাকে? পঞ্চাস ক্যান বিয়ার আর পাঁচ বোতল ভদকা এনেছিস। তোরা দুজনে কি সারাটা রাস্তা গলায় ঢালতে ঢালতে যাবি?”
অভি নির্লজ্জের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ।”
অরুনা বিরক্ত হয়ে ওঠে, “যাচ্ছেতাই মানুষ তোরা…”
সুপ্রতিমদা অরুনা কথা শুনে ফেলে চেঁচিয়ে ওঠে, “আরে, আমি ত বিয়ারের কথা একদম ভুলে গেছিলাম, তোমার কথা শুনে মনে পরে গেল। এবারে ত এক এক ক্যান মারতেই হয়।” অভিও মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”
পরী ওকে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা খাব ব্রিজ পৌঁছে যায়। ইনোভা সামনে দাঁড়িয়ে, কল্যাণী আর রানীরা গাড়ি থেকে নেমে চারপাশের পাহাড় দেখছে। একদিক দিয়ে শতদ্রু নদী একদিকে স্পিতি নদী এখানে মিশেছে। রিতিকা ওদের দেখে সুপ্রতিমদাকে গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে।
সুপ্রতিমদা গাড়ি দাঁড় করাতেই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পরে। সামনে রাস্তার অবস্থা দেখে সুপ্রতিমদা একটু থমকে যায়। ব্রিজের ওপারে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, মাথার ওপরে ছাদের মতন ঝুলে আছে পাহাড়, একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে উত্তাল তরঙ্গিণী স্পিতি নদী। ব্রিজের নিচে, স্পিতির আর শতদ্রুর জল মিলেমিশে যেন যুদ্ধে রত। অভি গাড়ির পেছনে গিয়ে দুটি ক্যান বিয়ার নিয়ে একটা সুপ্রতিমদার হাতে ধরিয়ে দেয়। পরী মেয়েদের নিয়ে স্পিতির দিকে হেঁটে নেমে যায়। দুরে দেখা যায়, নাকোর খাড়া রাস্তা। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠে গেছে। সুপ্রতিমদা পরীর কাছে গিয়ে রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। দুরে দাঁড়িয়ে অভি পরী কে দেখে, বেশ ভালো ভাবে রাস্তার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়।
সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “গুরু এই রাস্তায় আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এক নয় তুই না হয় বলবিন্দার কে বল।”
অভি চালকের সিটে বসে পরে। গাড়ি অতি সন্তর্পণে আঁকা বাঁকা চড়াই চরতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে বসে বারেবারে জানালার বাইরের দৃশ দেখে আর থমকে যায়। বুকের মাঝে দুরুদুরু নিয়ে রিতিকা আর অরুনা পরীর হাত চেপে ধরে দম বন্ধ করে বসে থাকে।
সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এই জায়গা কি করে খুঁজে বের করেছিস তুই? এই জায়গা’ত মনে হয় পৃথিবীর বাইরে।”
নাকো তে ওরা দুই দিন থাকে, সবাই নাকোতে বেশ আনন্দ করে। শুধু অভির রাত কাটে সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে, ইচ্ছে থাকলেও অরুনার মুখ দেখে পরীর কাছে যেতে পারেনা।
অভিরা নয় জন ছাড়া নাকোতে কোন ভারতীয় পর্যটকের দেখা পাওয়া যায়নি, বেশির ভাগ পর্যটক বিদেশি। কিছু ভারতীয় ছিল তারা বাইকে করে লাহুল স্পিতি ঘুরতে বেড়িয়েছিল।
একদিন বিকেল বেলায়, অভিরা সবাই মিলে নাকোর বৌদ্ধ মঠের মাঠে বসে সবাই সূর্যাস্ত দেখছিল। পরী ওর পাশে কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকে, আনমনা হয়ে যায় দুজনেই, সূর্যাস্তের লাল কিরন ওদের যখন স্নান করিয়ে দেয়। পরী ফিসফিস করে ওর কানে মনে করিয়ে দেয় সেই রাতের উপহারের কথা। সেই স্মৃতির রোমন্থনে অভির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, সুমধুর সেই স্মৃতি, পরীকে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে তপ্ত চুম্বন এঁকে দেয়।
নাকোর শেষ রাতে, অভি আর সুপ্রতিমদা আকাশ দেখতে বের হয়, হাতে ভদকার বোতল, ভেবেছিল দুরে হেলিপ্যাডের কাছে গিয়ে, দুজনে মিলে একটু নিরিবিলিতে সুখে পান করবে। ঠিক সেইসময়ে রিতিকা দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের সাথে এসে যোগ দেয়। অভিকে জিজ্ঞেস করে যে সুপ্রতিমদাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে, অভি আকাশের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, আকাশ গঙ্গা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘহীন, দূষণহীন স্বচ্ছ আকাশে লক্ষ কোটি তারার সমাবেশ, আকাশগঙ্গা তারামন্ডল দেখে ওরা অবাক হয়ে যায়। অভি দেখল যে এর পরে রিতিকাকে নিয়ে গেলে ওদের ভদকা পানে ব্যাঘাত ঘটবে তাই একবার রিতিকাকে ফিরে যেতে অনুরধ করে। রিতিকা জানায় যে সব মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে, পরী অরুনাকে নিয়ে অনেক আগেই ঘরে ঢুকে পড়েছে, ওর একা একা কি করবে তাই অগত্যা ওদের সাথে। সুপ্রতিমদা অভির দিকে একটু কটমট করে তাকায়, সেই রাতে বেচারা ভদকা বোতোলেই বন্ধ থেকে যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় খাওয়াদাওয়া করে অভিরা বেড়িয়ে পরে কাজার উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক আবার সুপ্রতিমদা। নাক থেকে বেড়িয়েই রাস্তা বেশ সুন্দর দেখে সুপ্রতিমদার আর অভির মন খুশিতে ভরে যায়। কিছুদুর গিয়েই আসে মালিং টপ, সমুদ্রতল থেকে বারো হাজার ফুট উচ্চতায়, আশেপাশের পাহাড় যেন ওর নিচে পরে রয়েছে। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, সামনে থেকে দুটি বিদেশি পর্যটক সাইকেলে চেপে ওদের দিকে আসে। সুপ্রতিমদা ওদের থামিয়ে সামনের রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। রাস্তার অবস্থা মোটামুটি, ওরা ঘুই নামে একটা ছোটো গ্রামে ঘুরতে গেছিল, সেখান থেকে আসছে ওরা। সেই গ্রামটা নাকি অনেক সুন্দর, ঠিক যেন পাহাড়ের কোলে পটে আঁকা ছবির মতন আর মাঝখান থেকে একটা অতি ক্ষুদ্র জলধারা বয়ে চলেছে। সেই শুনে সব মেয়েরা উতফুল্লে চেঁচিয়ে ওঠে যে ওরা ঘুই যাবে। অভি আর সুপ্রতিমদা ম্যাপ খুলে ঘুইয়ের অবস্থান দেখে নেয়।
তারপরে সুপ্রতিমদা জানায়, “আমরা সবাই ঘুই যাবো, তারপরে কাজা।”
সেই কথা শুনে রিতিকা সুপ্রতিমদার ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে, “মেরা দিল কা রাজা, অনেক ধন্যবাদ।”
মালিং ছাড়িয়েই কিছু দূর যেতে সামনে রাস্তার ওপরে দিয়ে একটা ছোটো ঝরনা বয়ে যেতে দেখে। সেই দেখে সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠে, একপাসে গভীর খাদ, খাড়া হয়ে নিচে নেমে গেছে স্পিতি নদীর তীরে, অন্য পাশে ধুসর পাহাড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে জলধারা। একটাই রাস্তা সামনে।
সুপ্রতিমদা গাড়ি থামিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “গুরু আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। বারো হাজার ফিটের ওপরে রাস্তায় এই জল, তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি? মাথা খারাপ নাকি?”
মেয়েরা গাড়ির ভেতরে ভয়ে চুপ করে বসে। অরুনা আঁতকে ওঠে, “আমি আর আগে যাবো না, তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে চল।”
পরী আদর করে বকুনি দেয় অরুনাকে, “ধুর, এইরকম ভয় পেলে হয় নাকি, আমরা সবাই আছি, তোর সাথে।” অভির দিকে একটু ভয় নিয়ে, কিন্তু মনে প্রবল সাহস নিয়ে তাকিয়ে বলে, “অভি, গাড়ি চালাও।”
বুক দুরদুর করে ওঠে অভির, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দাঁতে দাঁত পিষে, পরীর দিকে তাকিয়ে মনের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে চালকের সিটে বসে পরে অভি।
রিতিকা আর অরুনা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। রিতিকা বলল, “আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেলে ভাল হবে, অন্তত কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে চালাতে পারবে অভি। আমরা পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে নেই, ও সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসুক।”
পেছনে ইনোভার থেকেও সবাই নেমে গেছে। আমজাদ অভির কাছে এসে একবার জিজ্ঞেস করে যে গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দার আর অভি ছাড়া দুই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে দাঁড়ায়।
অভির বুকের মাঝে দামামা বাজতে শুরু করে, চোখ বন্ধ করে বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গাড়ি প্রথম গিয়ারে নিয়ে, অতি সন্তর্পণে ঝরনার ওপরে নামিয়ে দেয় অভি, কপালের ঘাম নাক বেয়ে নেমে আসে। অবশেষে গাড়ি ঝরনা পার হয়ে যায় আর সবার সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাঁচে।
পরী দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠে অভিকে জড়িয়ে প্রাণপণে ধরে বলে, “আমার সাহসী ছোট্ট রাজকুমার।”
তারপর গাড়ি নিচে নামতে শুরু করে।
অরুনা অভিকে বলে, “অনেক ঘোরা হয়েছে, আমি কোনদিন এখানে আসব না। এটা ঘোরার জায়গা নাকি? কি সাঙ্ঘাতিক আর ভয়ঙ্কর রাস্তা ঘাটরে বাবা। জায়গায় জায়গায় আবার রাস্তার ওপর দিয়েই ঝরনা বয়ে চলেছে।”
রিতিকা সুপ্রতিমদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “হানি, আমরা হানিমুন করতে এখানে আসব।”
পরী হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “এখন কি হানিমুন করছ না?”
সবাই পরীর কথা শুনে হেসে ফেলে, রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
কিছুদুর চলার পরে ওরা ঘুই যাবার রাস্তা দেখতে পায়। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, একটা গাড়ি যেতে পারে, একপাসে উঁচু খাড়া পাহাড়, অন্য পাশে একটা সরু নামহীন পাহাড়ি নদী, বড় বড় পাথরের ওপর দিয়ে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছে মহনার পানে। দুপুর প্রায় একটা নাগাদ ওরা ঘুই পৌঁছে যায়। খুব ছোটো একটি গ্রাম, চারদিকে উঁচু খাড়া পাহারে ঘেরা।
ওদের গাড়ি ঢুকতে দেখে কোথা থেকে একটা ছোটো ছেলে দৌড়ে আসে। অভিদের জিজ্ঞেস করে যে ওরা মামি দেখতে এসেছে কিনা। ছেলেটার কথা শুনে সবাই অবাক, এই রকম এক জন বিরল জায়গায় মামি? সুপ্রতিমদা গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটাকে মামির কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ছোটো মন্দির আছে। সেখানে এক বৌদ্ধ মুনির মমি রাখা আছে। সেই মমি নাকি ছোঁয় হাজার বছরের পুরান আর প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত। ওদিকে ইনোভা থেকে দীপঙ্কর নেমে এসে সুপ্রতিমদা কে জিজ্ঞেস করে জায়গার ব্যাপারে। সুপ্রতিমদা ওকে মমির ব্যাপারে জানায়। সবাই সেই মমির কথা শুনে টাকে দেখতে উৎসুক হয়ে ওঠে।
গ্রামের শেষ প্রান্তে সেই বৌদ্ধ মুনির মন্দিরে হলুদ আর সাদা সিল্কের কাপরে ঢাকা কাঁচের বাক্সে রাখা মমি। সেই মমি দেখে সবাই বিস্ময়ান্বিত হয়ে যায়। সবাই কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আনন্দ নেয়। অভির শরীরে যেন আর শক্তি নেই তাই বল্বিন্দারকে অনুরধ করে গাড়ি চালানর জন্য।
ফিরে যাবার কথা শুনে অরুনা ছাড়া সব মেয়েরা চেঁচিয়ে ওঠে, “এখান থেকে আমরা কোথাও যাব না, আজ রাতে এখানে থাকব।”
দীপঙ্কর আর সুপ্রতিমদা মেয়েদের বুঝাতে চেষ্টা করে যে ঘুই খুবই ছোটো জায়গা, এখানে হোটেল বা থাকার কোন জায়গা নেই, এমনকি এখানে খাবার জায়গাও নেই, সেই মত অবস্থায় এখানে থাকা যেতে পারেনা।
অভিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পরী বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে?” বাকিদের দিকে দেখে বলে, “আমরা আজ রাতে এখানে থাকব।”
অভি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে এখানে থাকার বাঁ খাওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। অভি হতাশা নিয়ে সবার দিকে তাকায়।
কল্যাণী অভিকে কিছু বলতে না পেরে দিপঙ্করের ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, “টেন্ট কেন এনেছ, শুধু দেখানর জন্য?”
দীপঙ্কর অসহায়ের মতন অভির দিকে তাকায়, তাঁবুর ব্যাপার ওর পরিকল্পনায় ছিল না।
অরুনা অভির কাছে এসে মৃদু সুরে বলে, “প্লিস অভি, দেখ সব মেয়েরা থাকতে চাইছে, ওদের কথা ভেবে থেকে যা।”
অরুনার মিষ্টি মুখের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারলনা, শেষ পর্যন্ত সবাইকে জানিয়ে দিল যে রাতে ওরা টেন্টে থাকবে। পরী সেই ছোটো ছেলেটাকে দুশো টাকা দিয়ে তাবু খাটানোর জায়গা আর কিছু কাঠের ব্যাবস্থা করতে অনুরধ করে।
সেই ছোটো নদী পার করে একটা সমতল ভুমিতে তাঁবুর জায়গা ঠিক করা হয়। ছেলেরা কোনোরকমে তাবু খাটায়, সারাদিন ওরা ঘুই ঘুরে বেড়ায়। মেয়েরা নদীর সেই হীম শিতল জলে অনেকক্ষণ ধরে মজা করে। রাতের বেলায় তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে গল্প করে। এই রকম ভাবে রাত কাটানোর সবার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। অভির জীবনের সব থেকে স্মরণীয় দিন, একদিকে পরীর আনন্দ আর অন্যদিকে ওর দেবী, অরুনার মুখে হাসি, ওর কাছে যেন পৃথিবীর সব খুশি একত্রিত হয়ে গেছে।
আগুনের চারদিকে সবাই মাটিতে বসে। পরীর কোলে হেলান দিয়ে অভি ভদকার গ্লাসে চুমুক দিতে থাকে। ওদের ঠিক সামনে অরুনা বসে। বাকি তিন জোড়া বেশ আনন্দ করছে।
এমন সময়ে রিতিকা বলে, “একটু গান করলে বেশ ভাল হয়, কি বল সবাই?”
ওর কথা শুনে অভি বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার প্রেমিকা দারুন গান গায়, ওই সব থেকে আগে গান গাইবে।”
পরী মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে, “না না, আমি গান গাইতে যাবো না, গ্রামের লোকেরা আমার গান শুনে আমাদের মারতে আসবে।”
কল্যাণী পরীকে বলে, “বেশি দাম দেখাস না, আমি জানি তুই খুব সুন্দর গান গাস।”
অনেক অনুরধ করার পরে পরী অভির দিকে তাকিয়ে গান ধরে,
“এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
ও ও ও আমি হয়ে গেছি তারা…
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
আগে ছিল শুধু পরিচয়, পরে হল মন বিনিময়,
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা,
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।………”
গানের শেষে অভি পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। সবাই গান শুনে আপ্লুত হয়ে যায়।
রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি না শুধু জীবন, নদী, আকাশ, তারা এই শব্ধ গুলো বুঝতে পেরেছি, বাকি গানের কি মানে? যাই গেয়ে থাক না কেন, বড় মিঠে এই গান।”
সুপ্রতিমদা ওকে গানের মানে বুঝিয়ে দিতে, রিতিকা পরীর দিকে দেখে কৃতজ্ঞতায় মাথা নোয়ায়।
পরীর গানের শেষে সবাই অরুনাকে অনুরধ করে গান গাইতে। লাজুক অরুনা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, “না না না, আমি গান টান জানি না।” সবাই ওর স্বাস্থের কথা জানে তাই অরুনাকে কেউ বিশেষ চাপ দিল না। সুপ্রতিমদা রিতিকাকে গান গাইতে অনুরধ করে।
অরুনা এমন সময়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি গান গাইব।” অভি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে যে ওর চোখ দুটি চিকচিক করছে। অভি ঠিক বুঝতে পারেনা কি হল, সারাদিন ত ঠিক ছিল অরুনা।
অরুনা গেয়ে ওঠে,
“মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু,
ও মেরি আখো কা তারা হ্যায় তু,
জিতি হু ম্যায় ব্যাস তুঝে দেখ কর,
ইস টুটে দিল কা সাহারা হ্যায় তু,
মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু…”
গান শুনে অরুনার চোখের চিকচিক দেখে, অভির বুক কেঁপে ওঠে আবেগে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা অভি, গাল বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
পরী গালে আলতো করে ঠোঁট চেপে বলে, “ধুর বোকা, তোমরা দুজনো আবেগে যে এত ভেসে যাবে জানতাম না ত।”
রিতিকার বুঝতে দের হয় না যে আবেগের বাতাস আবহাওয়া কে ভারী করে তুলেছে। মনের মধ্যে আনন্দের জোয়ার এনে গেয়ে উঁচু সুরে ওঠে,
“ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
মিট জায়েগা সারা গিলা, হামসে গলে মিলতে রহো,
ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো, “
অভি ওর গান শুনে ওর দিকে হেসে বলে, “ডারলিং গলে মিলতে রহো ত বলে দিলে, আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে না।”
রিতিকা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, “শয়তান, তোমাকে কেন জড়িয়ে ধরতে যাব আমি?”
হাঁটুর ওপরে ভর দিয়ে অরুনার কাছে গিয়ে অরুনাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
অনেক রাত পর্যন্ত সবাই আনন্দে আর গল্প গুজব করে। রাতে ম্যাগি আর আলু সেদ্ধ খাওয়া হয়। রাতের খাবার পরে, সবাই তাঁবুর মধ্যে ঢুকে পরে নিজের নিজের স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে। অভি আর সুপ্রতিমদা খোলা আকাশের নিচে, নিভু নিভু আগুনের সামনে ভদকা নিয়ে বসে পরে।
পরী ওদের দিকে বিরক্তি ভরে চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমার দুটি মাতাল কি সবসময়ে মদে ডুবে থাকবে?”
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মিনতি করে, “বেবি, এই বোতলটা শেষ করেই আসছি।”
অভির কথা শুনে রিতিকা চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমরা তোমাদের ওইটা নিজেদের পেছনে ঢুকিয়ে নিও, আমাদের কাছে আর আসতে হবে না।”
রিতিকার মুখে গালাগালি শুনে সবাই হেসে ফেলে। শেষ পর্যন্ত ভদকা শেষ হয় না, অভি একটান মেরে বোতল ফেলে দেয় নদীর জলে।
পরের দিন সকালে উঠতে সবার দেরি হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পরে পরবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে, কাজা। মাঝ পথে ওরা তাবো নামের এক জায়গায় থেমে দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়। তাবোতে খুব সুন্দর এক বৌদ্ধদের মঠ আছে যা প্রায় হাজার বছরের পুরানো। কাজা পৌছাতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। হোটেল পেতে ওদের বিশেষ অসুবিধে হয় না। কাজায় যে হোটেলে ওরা ওঠে সেটা বেশ ছোটো কিন্তু খুব সুন্দর, মাঝ খানে একটা ছোটো বাগান আছে।
রাতের খাওয়ার পরে অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে যে পরী ওর সাথে রাত কাটাবে কিনা। উত্তরে পরী একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, “এত উতলা হচ্ছ কেন বলতো? আমি ত তোমার কাছে সারা জীবন থাকব। ওর মানসিক অবস্থার কথা একটু ভেবে এই কটা দিন সবুর করে যাও।”
অগত্যা অভির চোখের সামনে অরুনার শীতল মুখবয়াব ভেসে ওঠে, কিছু বলতে পারেনা পরীকে। ম্লান হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢুকে পরে, সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে।
এই ভয়ঙ্কর সুন্দর হীম শীতল মরুভুমির মাঝে, কাজা একটি মরুদ্যানের মতন, বড় শহর। এখানে বেশ কিছু দোকান আর হোটেল আছে। আসে পাশে দেখার অনেক ছোটো ছোটো জায়গা আছে। স্পিতি নদীর তীরে কাজা শহর, স্পিতি নদী এখানে অনেক চওড়া, কিন্তু নদিতে বিশেষ জল নেই, ছোটো ছোটো জলধারা বয়ে চলেছে ফাঁকা নদীর মাঝখান থেকে।
পরদিন সকালে উঠে অভিরা কাজা ঘুরতে বের হয়। শহরের বাইরে একটি বৌদ্ধদের মঠ আছে, সেখানে যায় ওরা। সেখান থেকে ওরা যায় কি নামের এক মঠে, বেশ উঁচু উই ঢিপির মতন পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত কি মঠ।
কি মঠে যাওয়ার পথে একটা বৃদ্ধাশ্রম দেখিয়ে পরী অভিকে বলে, “আমরা যখন বুড়ো বুড়ি হয়ে যাব, তখন আমাদের সব কিছু বিক্রি বাটা করে, যত দিন না ভগবান আমাদের আলাদা করে ততদিন এখানে থাকব।”
অভি আদর করে গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, “উম্ম, রানির যা ইচ্ছে তাই হবে।”
রিতিকা সামনের সিটে বসে ওদের কথা শুনে ফেলে। পিছন ফিরে তাকিয়ে পরীকে বলে, “তোমরা দুজনে একদম এক প্রান এক আত্মা। সুপ্রতিম যদি আমাকে একটু ওইরকম করে ভালবাসত।”
বলে, সুপ্রতিমদার গালে আদর করে একটা ছোটো চাঁটি মারে। সুপ্রতিমদা ওর হাতে চুমু খেয়ে নেয়।
কি মঠের পরে, ওরা আরও ওপরে চরতে শুরু করে। এই রাস্তা নাকি, ভারতের সব থেকে উঁচু গ্রাম, কিব্বের পর্যন্ত যায়। কিব্বের সমুদ্রতল থেকে প্রায় চোদ্দ হাজার ফিট উচ্চতায়, একটি ছোটো গ্রাম। সেখানে একটি অতি ছোটো মঠ আছে আর সেই মঠে খুব অল্প সংখ্যক সাধু থাকেন। মঠে ঢুকে দেখে যে একজন বৌদ্ধ সাধু পুজো করছেন আর সেই বৌদ্ধ মন্ত্র সবার মনের মধ্যে এক অনাবিল শান্তির ভাব এনে দেয়।
কিব্বেরে একটি ছোটো হোটেলে অভিরা দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়, সারাদিন কিব্বেরে কাটিয়ে বিকেলের দিকে কাজা ফিরে আসে। বিকেলে হোটেলে ফিরে চা খাওয়ার সময়ে অরুনা পরীকে বলে যে ও রাতে একা শুতে পারবে।
অরুনা, “আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে তোমাদের মাঝখানে এসে। আমি ঠিক আছি শুচিদি, আজ রাত থেকে আমি একা শুতে পারব।”
অভি অরুনার কথা শুনে পরীর দিকে ভুরু নাচিয়ে বলে, “বড়ে দিনো কে বাদ, বে বতনোকো ইয়াদ, পরী আয়ি হ্যায় আয়ি হ্যায়, পরী আয়ি হ্যায়।”
স্পিতির তীরে জুঁই ফুল
রাতের খাবার টেবিলে পরী অভির কানে কানে বলে, “আজ রাতে যদি ড্রিঙ্ক করেছ তাহলে কিন্তু আমার কাছে শুতে দেব না বলে দিচ্ছি।”
অভি কাতর মিনতি করে, “প্লিস হানি, একটা ছোটো করে, তারপরে আমি তোমার আলিঙ্গনে ধরা দেব।”
পরী বিরক্ত হয়ে বলে, “কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমি না ভদকা?”
অভি, “অবশ্যই তুমি, বেবি।”
পরী, “তাহলে, খাওয়ার পরে সোজা ঘরে চলে আসবে, না সিগারেট না ভদকা।”
নাক কুঁচকে কাতর মিনতি জানায় অভি। পরী রেগে গিয়ে ওর দিকে লাল চোখ করে বলে, “যা ইচ্ছে করো গিয়ে, আমি চললাম শুতে।”
তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে, রিতিকা আর অরুনাকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে কটমট করে তাকিয়ে জানিয়ে যায় যে পরীর মতন ওর অভিপ্রায় একই। কল্যাণীরা খাওয়া শেষ করে ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে শুতে চলে যায়।
সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে, “ভায়া, বেড়াল রেগে গেলে কিন্তু মাটিতে আঁচর কাটে।”
অভি, “ত কি হয়েছে, বেড়াল মারতে হলে গায়ে শক্তি ত চাই নাকি।”
সুপ্রতিমদা, “তোর বেড়াল কিন্তু আমার বেড়ালের চেয়ে বেশি রেগে আছে রে। রাতে তোর হালত খারাপ করে দেবে।”
অভি, “আমার ম্যাও আমি সামলে নেব শালা, তুই তোর ম্যাও কি করে সামলাবি তাই ভাব।”
অভি নিজেকে বলে যে, প্রেয়সীকে উত্যক্ত করে লাভ নেই। ঘরের মধ্যে মৃদু নীলচে আলো ঘরে একটা অপরূপ রোম্যান্টিক শোভার আবহাওয়া তৈরি করেছে। পরী কম্বল গায়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। দরজার দিকে মুখ ফিরে অভির জন্য অপেক্ষা করে একপাসে হয়ে শুয়ে আছে পরী, ঠোঁটে লেগে আছে এক অধভুত মিষ্টি হাসি। ডান হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে রাখা, উন্মুক্ত মসৃণ ফর্সা হাত। মাথার চুল মাথার পেছনে হাত খোঁপায় বাঁধা বালিশের ওপরে এলিয়ে পরে আছে। ঘরের মৃদু নীলচে আলো ওর ত্বকের ওপর যেন পিছলে যাচ্ছে। বাম হাত মুঠি করে কম্বলটিকে আঁকড়ে ধরে আছে উন্নত বুকের কাছে। কম্বলে ঢাকা দেহের অবয়াব দেখে মনে হয় যেন সাদা সমুদ্রের ওপরে এক মত্ত ঢেউ। উঁচু কাঁধ, সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমরে তারপরে ফুলে উঠেছে সুগোল নিতম্বদেশ। বাম পা ডান পায়ের সামনে রাখা, যার জন্য দেহের অবয়াব দেখে মনে হয় যেন এক জলপরী শুয়ে অভির দিকে প্রেমাগ্নির চাহনি নিয়ে তাকিয়ে।
নাকের ডগা লাল, গাল গোলাপি। মুখে প্রসাধনির লেশ মাত্র নেই, কানে দুল নেই, হাতে চুরি নেই। কাজল কালো, বাঁকা ভুরু জোড়া যেন ওকে উত্যক্ত করে জিজ্ঞেস করছে, কি ওই রকম ভাবে দেখছ? কোমল লাল ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, তার মাঝে ঝিলিক মারে মুক্ত সাজান দাঁত। চেহারায় এক সুন্দর আলক ছটা।
অভির নাকে ভেসে আসে পরীর মাদকতাময় জুঁই ফুলের সুবাস। সেই সুবাস সারা ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে আছে আর অভিকে মাতাল করে তুলেছে। অভি পরীর চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করে, “প্রেয়সী কি বাঘিনীর মতন ক্ষিপ্ত, না মাছরাঙার মতন অপেক্ষা করছে মাছ ধরার জন্য?”
অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে, ওর দিকে তাকিয়ে পায়ের ওপরে হাত রাখে। কম্বলের ওপর দিয়ে, বাম পায়ের গুলির ওপরে আদর করে দেয়।
পরী গম্ভির সুরে ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি হাত পা ধুয়ে শুতে এস, আমি খুব ক্লান্ত, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”
গম্ভির গলার আওয়াজ শুনে অভি একটু ঘাবড়ে যায়। পরী বালিশের ওপরে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভি ভাবে, “একি হল? প্রেয়সী কেন ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না?”
সামনে ঝুঁকে পরে জুতো খুলতে যায় অভি, পরী পেছন থেকে ওর শিরদাঁড়ার নিচে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মৃদু খোঁচা মারে। নখের আঁচরের অনুভুতি অভির শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। অভি মাথা ঘুরিয়ে পরীর দিকে তাকায়, পরী সঙ্গে সঙ্গে কম্বলের মধ্যে পা টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। অভি কম্বলের নিচের দিক পায়ের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পায়ের পাতার তলায় তর্জনী দিয়ে আঁচর কেটে দেয়। পরী মোচর দিয়ে উঠে, খিলখিল করে হেসে ফেলে।
অভি ওর হাসি শুনে বিছানার ওপরে লাফ দিয়ে উঠে পরীকে বলে, “আমার সাথে দুষ্টুমি করা হচ্ছে, বেবি?”
পরী ওর বুকের ওপরে পা রেখে ঠেলে দিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে এস।”
অভি, “তারপরে?”
পরী, “তারপরে আর কি, তারপরে ঘুমিয়ে পড়ব।”
অভি হাফ প্যান্ট হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। প্রেয়সীর হাসি আর গালের লালিমা ওর ভেতরের জমে থাকা প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রেয়সীকে বিছানায় বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখা উচিত নয়। চোখের উষ্ণ লালিমার ছটায় অভির বুঝতে দেরি হয়নি যে চাতকের ন্যায় প্রেম বারির জন্য অপেক্ষা করছে প্রেয়সী। যেন এক জলপরী সমুদ্র থেকে উঠে এসে ওর বিছানায় শুয়ে প্রেম বারির জন্য কাতরাচ্ছে। কোনোরকমে স্নান সেরে, দাড়ি কামিয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে অভি। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়, বিছানায় পরী নেই।
দরজা অল্প খোলা, কম্বল এলোমেলো হয়ে পরে আছে বিছানার ওপরে। অভি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা, হল টা কি? এত রাতে পরী ওকে একা ছেড়ে আবার কোথায় চলে গেল। ঘরের বাল্ব জ্বালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় বাইরে দেখতে যে গেল কোথায় পরী।
যেই মাত্র দরজা খুলেছে, তখনি পরী অভিকে পেছন থেকে এসে কোমরের দুপাস দিয়ে হাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নগ্ন পিঠের ওপরে চেপে ধরে নরম বুক। বুকের ওপরে রাখে হাতের তালু, পিঠের শিরদাঁড়ার ওপরে চেপে ধরে গাল। উষ্ণ দেহের স্পর্শে মনে হয় যেন পরীর মাখনের মতন পেলব শরীর ওর পিঠের ওপরে গলে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। অভি দরজা বন্ধ করে সামনে ঝুঁকে, পরীকে পিঠের ওপরে তুলে নেয়। পরী ওর পিঠের ওপরে ভার দিয়ে মাতি থেকে পা ভাঁজ করে তুলে নেয়।
প্রেমঘন সুরে কানে কানে বলে, “খুঁজে পেলে না ত আমাকে।”
অভি, “ছিলে কোথায়?”
পরী ওর বাম বুকের ওপরে হাত চেপে বলে, “আমি এখানে ছিলাম, তুমি দেখতে পাওনি।”
বিছানার দিকে হেঁটে যায় অভি, পরী ওর পিঠের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু খেতে শুরু করে। তপ্ত ঠোঁটের পরশে অভির দেহে বিদ্যুতের সঞ্চার হয়। বাঁ দিকে একটু ঝুঁকে পরে, পরীকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয় অভি। পরী বিছানার পায়ের দিকে বসে, পেছন দিকে ঝুঁকে যায় কুনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে। তার ফলে পীনোন্নত বুক জোড়া হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন আকাশের পানে ঠেলে ওঠে। পরীর পরনে সিল্কের স্লিপ, কাঁধ, উপরি বক্ষ, বুকের খাঁজের অধিকাংশ অনাবৃত। পরনের রাত্রিবাস অনেক ছোটো, কোনোক্রমে শুধু মাত্র জানুর মাঝ পর্যন্ত নেমে এসেছে। জানুর মসৃণ ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পিছল খেয়ে পড়ছে। সেই দৃশ্য দেখে অভির সিংহ ভেতরে ভেতরে মাথা উঁচু করে জেগে ওঠে, তলপেটের কাছে যেন তরল আগুন দলা পাকিয়ে মোচর দেয়। পরী অনুধাবন করে অভির তপ্ত চাহনি, যেন ওর অনাবৃত জানু, বুক, কাঁধ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রেমঘন চাহনি নিয়ে তাকায় উদ্দাম অভির দিকে। অভি পরীর দিকে ঝুঁকে পরে ওর নরম কোমর হাতের মাঝে চেপে ধরে। কোমল নারী মাংস তপ্ত আঙ্গুলের স্পর্শে যেন গলে যায়।
অভি নিজের শরীর টেনে নিতে চায় পরীর দেহের ওপরে, কিন্তু পরী ওর ডান পা ভাঁজ করে অভির বুকের ওপরে চেপে ধরে। পরীর হাঁটু অভির চিবুক ছুঁয়ে যায় আর পায়ের পাতা অভির নাভির কাছে ছুঁয়ে যায়। অধভুত সেই স্পর্শে অভির সারা দেহে কাঁটা দিয়ে ওঠে। অভি যত চেষ্টা করে পরীর দিকে ঝুঁকতে, পরী ততই যেন ঠেলে দেয় অভিকে, দুজনে যেন প্রেমের এক খেলায় মেতে ওঠে। দুজনের চোখে ঝরে প্রেমের ঘন তরল আগুন।
পরীর রাত্রিবাস জানু ছাড়িয়ে কোমর পর্যন্ত উঠে আসে। সুগোল ফর্সা ডান নিতম্ব অনাবৃত হয়ে যায় ঠেলাঠেলির খেলায়। পরী রাতে শোয়ার সময়ে অন্তর্বাস পড়তে ভালবাসেনা, অভির মাথায় সেই চিন্তা আসতেই অভির চোখ চলে যায় পরীর জানুসন্ধির দিকে। রাত্রিবাস উঠে গেছে ঠিকই কিন্তু অতি সন্তর্পণে ঢেকে রেখেছে পরীর জানুসন্ধির নারীঅঙ্গ। প্রেমের মত্ত ক্রীড়ায় দুজনের শ্বাস বর্ধিত হয়ে ওঠে। অভি ঠেলে দেয় পরীর ডান জানু, পরীর উন্নত বুকের ওপরে।
পরী দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে, “ওই রকম ভাবে কি দেখছ, সোনা?”
অভি, “আমি আমার জলপরীকে দেখছি, যে সাগর থেকে উঠে আমার বিছানায় শুয়ে আমার প্রেমের জন্য কাতরাচ্ছে।”
পরী বড় বড় চোখ করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে দেরি কেন করছ? জলপরীকে কোলে তুলে আবার সাগরের জলে ছেড়ে দাও।”
অভি, “সাগরের জলে যে অনেক ভয়ঙ্কর মাছ আছে। আমি ত আমার জলপরীকে বুকের মাঝে রাখতে চাই।”
অভির পেটের ওপরে পরীর কোমল নিতম্বের ছোঁয়া লাগে, সেই সুখের স্পর্শে অভির মনে যেন ওর আগ্নেয়গিরি এখুনি ফেটে পড়বে। অভি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “এই স্লিপ টা কবে কিনেছ, আগে দেখিনি ত।”
পরী, “অনেক দিন আগে কিনেছি, সেই এপ্রিলে যখন তোমার বাড়িতে এসেছিলাম।”
অভি ওর শরীরের ওপর থেকে ভার হাল্কা করে আর সেই সঙ্গে সঙ্গে পরী পেটের ওপরে মাথা নিচু করে বিছানার ওপরে শুয়ে পরে। নরম বালিস আঁকড়ে ধরে মুখ লুকিয়ে নেয় তুলোর মধ্যে। কামনার আগুনে জ্বালায়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায়, দ্রুত ওঠানামা করে পরীর পিঠ, যেন বুকের মাঝে এক বিশাল ঝড় বয়ে চলেছে।
সিল্কের সেই ছোটো রাত্রিবাস পরীর সুগোল নিতম্ব ঢেকে রাখতে পারেনা। নরম সুগোল দুই নিতম্ব আর নিতম্বের মাঝের গভীর সরু খাঁজ পুরপুরি অভির কামতারিত চাহনির সামনে অনাবৃত। নিম্নাঙ্গে পরনে কোন অন্তর্বাস নেই।
অভি পরীর মেলে ধরা পায়ের দুপাশে হাত রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে পরে, বাম পায়ের গুলির ওপরে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। ডান হাত নিয়ে যায় পরীর অনাবৃত ডান পায়ের গুলির ওপরে আর ধিরে ধিরে আদর করতে শুর করে, পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর পেছনের ভাঁজ পর্যন্ত। আদরের ছোঁয়ায় পরীর উত্তপ্ত শরীর মোচর দিয়ে ওঠে, মৃদু শীৎকার ওঠে ওঠে পরী।
অভি মুখ নামিয়ে আনে পরীর জানুর পেছনে, রাত্রিবাস না সরিয়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে, জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে ভিজিয়ে দেয় পরীর নরম নিতম্ব। ভিজে ওঠা রাত্রিবাস লেপটে যায় পরীর তপ্ত নিতম্বের ত্বকের ওপরে, বারংবার কেঁপে ওঠে কোমল নিতম্ব দুটি। আলতো করে চেপে ধরে ঠোঁট পরীর নিতম্বের ওপরে।
পরী মৃদু কনে শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম্মম……… অভি… সোনা…”
অভি মাথা উঠিয়ে দেখতে চেষ্টা করে পরীর মুখের দিকে, পরী মাথা গুঁজে রাখে বালিশের ওপরে। নিতম্বের ওপরে ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে অভির ঠোঁট উঠে আসে, শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, যেখানে শিরদাঁড়া আর নিতম্ব মিলেছে। ঠোঁট চেপে ধরে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, ভিজিয়ে দেয় রাত্রিবাসের কাপড় মুখের লালায়। নগ্ন বুকের নিচে চেপে ধরে কোমল নিতম্ব, পিষে দেয় পরীকে বিছানার সাথে আর বুকের নিচে। পায়ের পাতার ওপরে পরী অনুভব করে অভির তপ্ত শলাকা। কামনায় প্রজ্বলিতে দেহ মুচরে ওঠে কঠিন পরশ পেয়ে। অভির বুকের নিচে যেন প্রেয়সীর সাপের মতন শরীর বারে বারে মোচর দেয় আর অভির শলাকাকে বারেবারে উত্যক্ত করে তোলে।
পরী অভির নামে ঠোঁটে এনে মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “অভিইইইইই… আমাকে মেরে ফেললে যে হানি…”
বিছানার ওপরে চেপে ধরা বুক, দুপাশ থেকে ফেটে বেড়িয়ে পরে, পরীর মুখ তখন বালিসে গোঁজা। রাত্রিবাস পিঠের দিকে অর্ধেকটা উন্মুক্ত, পুরো কাঁধ আর পিঠের অধিকাংশ অনাবৃত, লিপ্সা মাখানো অভির চোখের সামনে।
অভি আরও ঝুঁকে পরে পরীর পিঠের ওপরে চুমু দিতে শুরু করে। ঘাড়ের নিচ থেকে শুরু করে, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে যে টুকু অনাবৃত, সেই টুকু অংশে চুমুতে ভরিয়ে দেয় অভি, আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে দাগ কেটে দেয়। তপ্ত শ্বাসে পরীর সারা দেহে কাটা দিয়ে ওঠে। ভিজে গেছে পিঠ অভির তপ্ত লালায়। মাঝে মাঝে অভি পরীর পিঠের নরম মাংস দাঁতের মাঝে নিয়ে আলত করে কামড়ে দেয়, জিব পুর বের করে চেটে দেয় শিরদাঁড়া। পরীর মুখ লাল, গায়ে ঘাম। অভির জিবে লাগে নোনতা স্বাদ।
বাম কুনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে পরীর বাম দিকে শুয়ে পরে অভি, কুনুই ছুঁয়ে যায় পরীর বাম বক্ষের পাশে। ডান হাতে পরীর মাথার চুলের বাঁধন খুলে দেয়। মুঠি করে ধরে নেয় পরীর মাথার পেছনের চুল আর ধিরে ধিরে নখের ডগা দিয়ে আঁচরে দেয় মাথা। পরী পাগল হয়ে ওঠে অভির উষ্ণ আদরের ছোঁয়ায়।
অভি সামনে ঝুঁকে মরালী গরদানে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। পরীর কোমরের ওপরে অভি ওর ডান পা উঠিয়ে দেয়, হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে নিতম্ব আর পায়ের পাতা দিয়ে বুলিয়ে দেয় জানুর পেছন দিকে। ধিরে ধিরে অভির পা, জানু থেকে ওপরে উঠে যায় আর রাত্রিবাস সরে যায় নিতম্বের ওপর থেকে। পরী ওর বাম নিতম্বের পাশে অভির তপ্ত শলাকার পরশ অনুভব করে, মনে হয় যেন কঠিন কোন গুঁড়ি ওর কোমলতাকে চেপে ধরে পেষণ করছে।
ঘাড়ের পেছনে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। চোখ দুটি শক্ত করে বন্ধ করে মাথা ওঠায় পরী, চিবুক রাখে বালিশের ওপরে আর বিছানার মাথার দিকে মুখ। ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, আর সেই তপ্ত ঠোঁট জোড়ার ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস বয়ে চলে অবিরাম। ঘাড়ের পেছনে দাঁত দিয়ে আলতো করে চেপে দেয় অভি। দাঁতের আদরের পরশে পাগল হয়ে ওঠে পরী। বুকের ওপরে শক্ত কফ্রে চেপে ধরে বালিশ, যেন নরম তুল দিয়ে ভরিয়ে দেবে কোমল উন্নত বুক জোড়া।
পরী এবারে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে শীৎকার কর ওঠে, “আআআআআ… তুমি যে আমাকে একদম পাগল করে দিলে অভি…”
পরীর মাথার পেছনে নাক ডুবিয়ে চুলের ঘ্রান বুকে টেনে নেয়। নগ্ন বুক চেপে ধরে পরীর অনাবৃত পিঠের ওপরে। কানে কানে বলে, “বেবি, তুমি এত রসাল, যে আমি তোমার সারা শরীর চুমু খেলেও সেই রস ফুরাবে না। তোমার দেহের প্রতি রোম কুপের থেকে নির্গত রস যে কত মধুর তা বলে বুঝাতে পারবনা বেবি।”
পরী, “আমি ত একটা কুঁড়ি ছিলাম সোনা, তোমার ছোঁয়ায় আমি সিক্ত ফুটন্ত রসে ভরা হয়ে উঠেছি।”
অভি, “আলো কি বন্ধ করে দেব, বেবি?”
পরী, “আমি জানিনা, তোমার যা ইচ্ছে করে সেটা করও। আজ আমার কিছু বলার নেই অভি। আজ তুমি আগের থেকে অনেক অনেক বেশি দুষ্টুমি করছ, সোনা।”
ডান হাত দিয়ে পরীর ডান কাঁধ থেকে রাত্রিবাসের পাতলা বাঁধন নামিয়ে দেয়। কাঁধ একটু নড়িয়ে অভিকে সাহায্য করে যাতে রাত্রিবাস খুলে আসে। চিবুক দিয়ে বাম দিকের রাত্রিবাসের বাঁধন নামিয়ে দিতেই পরীর শরীর মোচর দিয়ে ওঠে। অভির মাথায় খেলে যায় যে আজ রাতে ও তাঁর প্রেয়সীর অপরূপ দেহ সুধা দুচোখ ভরে পান করার সুযোগ পাবে, অনেক দিন ধরে অভির অভিপ্রায় আজ রাতে সফল হবে। আসন্ন সুধা পানের চিন্তায় যেন বুকের মাঝে উত্তাল ঢেউ দোলা দেয়।
ফিস ফিস করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “সোনা আর কি সুধা লুকিয়ে আছে তোমার দেহে?”
অভির আঙ্গুল পরীর বাজুর ওপরে আলতো করে আঁচর কাটে। মৃদু কনে বলে পরী, “তুমি যা চেয়েছিলে, সেই বাগান আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি।”
কথাটা বলতে গিয়ে পরীর কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, চোখ দুটি লজ্জায় আরও শক্ত করে চেপে নেয়। গাল লাল, সারা শরীর যেন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই কথা বলার সময়ে। অভি চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “উউউউউ… বেবি…”
পরী শেষ পর্যন্ত অভির কথা রেখে জানুমাঝের কুঞ্চিত ঘাসের বাগান পরিষ্কার করে দিয়েছে। ডান হাত দিয়ে পরীর নিতম্বে আলতো করে চাঁটি মারে অভি, মৃদু হাতের চাপে, নরম মাংসে ঢেউ খেলে যায়।
কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে, “দুষ্টু পরী আমাকে আজ রাতে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে যে।”
পরী প্রেমের ঘোরে ককিয়ে বলে, “তোমার ছোঁয়ায় আমি পুরো পাগল হয়ে গেছি, আমি আর তোমাকে কি মারব, সোনা।”
অভি নিতম্বের দিকে দেখে একবার তারপরে, ধিরে ধিরে রাত্রিবাস উঠিয়ে দেয় নিতম্বের ওপর থেকে। ধিরে ধিরে ঘরের আলোয় অনাবৃত হয় কোমল সুগোল ফর্সা নিতম্ব। মসৃণ ত্বকের ওপরে যেন আলো পিছলে যায়। আঙ্গুলের নখ দিয়ে বৃত্তাকারে আঁচর কাটে নরম নিতম্বের ত্বকের ওপরে। বারে বারে কেঁপে ওঠে সুপুষ্ট নিতম্ব দুটি আর ঢেউ খেলে যায় নরম মাংসের ওপরে। পরী আর থাকতে না পেরে বালিশে ঠোঁট চেপে অভির নাম ধরে ডাকে। অভির নিখের ছোঁয়ায় নিতম্বের কাপুনি যেন আরও বেড়ে যায়, মনে হয় যেন বৃষ্টিতে ভিজে এক জোড়া নরম খরগোস ঠাণ্ডায় কাঁপছে।
অভি বিছানা থেকে নেমে পরীর পায়ের কাছে বসে পরে, রাত্রিবাস নিচের থেকে টেনে নামিয়ে দেয়। পরী শরীরকে আলতো করে মুচরে, অভিকে সাহায্য করে গায়ের থেকে কাপড় খানি খুলে ফেলতে। অভির চোখের সামনে পেটের ওপরে শুয়ে প্রেমের আগুনে থরথর কাপে প্রেয়সীর উন্মুক্ত দেহ পল্লব। পা জোড়া এঁকে ওপরের সাথে শক্ত করে চেপে ধরা, মনে হয় যেন মাঝখান থেকে একটি ঘাসের পাতাও যেতে পারবে না। প্রেমের কাপনে বানংবার দেহের ওপরে ঢেউ খেলে যায়। অভি এই প্রথম বার প্রান প্রেয়সীকে জন্মদিনের পোশাকে দেখে। এই কামার্ত দেহ পল্লব যে কোন মুনি ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করে দিতে পারে।
অভি পরীর দুপা ধরে ধিরে ধিরে চিত করে শুইয়ে দেয়। পরী মাথার বালিস শক্ত করে ধরে থাকে, অতিব লজ্জায় দুচোখ চেপে বন্ধ করা। অভির চোখ যায় পীনোন্নত বুকের দিকে। হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন বুক জোড়া আকাশের দিকে উঁচিয়ে, আর শৃঙ্গ ওপরে বসে থাকা তপ্ত গাড় বাদামি রঙের নুড়ি। সেই বুকের দিকে চোখ গেল অভির, বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গকে শান্ত করে নেয় অভি, প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়ার আগে আরও কিছু খেলা বাকি তাঁর প্রেয়সীর সাথে। দৃষ্টি চলে যায় ফর্সা কোমল বুকের দিকে, ব্রিন্তের চারদিক থেকে নেমে আসে অতিব হাল্কা নীলচে আর লালচে শিরা উপশিরা।
বুকের নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত সরু হয়ে নেমে আসে মধ্যচ্ছদা, যেন কোন সরু পাহাড়ি নদী, সেই নদী যেন নাভিদেশে এসে মিশে গেছে। গোল পেটের নিচে একটু ফুলে উঠে অতিব সুন্দর বাঁক নিয়ে নেমে গেছে ফোলা তলপেট। উত্তেজনায় কাঁপছে পরীর তলপেট। পরী যেন আর থাকতে পারছে না অভির উত্তপ্ত চাহনির সামনে, বারে বারে শরীর মুচরে উঠছে।
অভির দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হয় জানুসন্ধিখনে। পরীর জানুসন্ধি ফুলে বেঁকে হারিয়ে গেছে চেপে ধরা দুই জানুর মাঝে। অতিব যত্নে সাজান সেই নারীত্বের সুখের দোরগোড়া, রোমের লেশ মাত্র নেই।
পরনের কাপড় খুলে ফেলে অভি, কঠিন সিংহ অবশেষে ছাড়া পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পরে পরীর জানুর ওপরে আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে আদর করতে থাকে জানুর ওপরে। ধিরে ধিরে ঠোঁট ওপরে নিয়ে আসে অভি।
পরীর অর্ধ ফাঁক করা ঠোঁটের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে একটা আওয়াজ, “আআআআ… পারছিনা… সোনা…”
বাম পা ভাঁজ করে নেয় পরী আর নারীসুখের গহ্বর অভির দৃষ্টির সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। অভির নাকে ভেসে আসে জোরালো এক ঘ্রান, জিবের ডগা পরীর জানুর মাঝে নিয়ে আদর করে চেটে দেয়।
চোখের সামনে উন্মুক্ত পরীর সুখের স্বর্গদ্বার। এত সুন্দর করে পরিষ্কার করে রেখেছে যে, সেই দ্বার দেখে মনে হয় যে, উল্টান একটি ত্রিভুজের মাঝে অতিব সরু এক নদী।
সেই গোলাপ ফুলের পাপড়ির কোমলতা বুঝতে অভির দেরি লাগেনা। প্রেমের বারিতে সিক্ত হয়ে উঠেছে দুই পাপড়ি আর অল্প অল্প বেড়িয়ে সিক্ত করে তুলেছে বাইরেটা। পরীর সারা শরীর কেঁপে ওঠে এই ভেবে যে অভির আগুন ঝরান চাহনি ওর নারীত্বের দোরগোড়ায় কেন্দ্রীভূত আর পুড়িয়ে ওকে ছারখার করে দিচ্ছে। অল্প ঠোঁট খুলে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে পরীর নারীত্বের ওপরে, পরীর দেহ প্রচন্ড ভাবে কেঁপে ওঠে তপ্ত শ্বাসের পরশে। কামাতুর অভির চোখের সামনে সেই মালভূমির দ্বার অল্প অল্প কাঁপতে থাকে।
অভি দু’হাত বাড়িয়ে বুকের ওপরে নিয়ে এসে, থাবা মেলে দুই বক্ষ হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে পিষে দেয়। হাতের তালুর নিচে চেপে ধরে তপ্ত শৃঙ্গের নুড়ি। পরী, বুকের ওপরে অভির উত্তপ্ত হাতের পেষণে কামপাগল হয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পরে জানু মাঝে, জিব বের করে চেপে জানুমাঝের ধরে সিক্ত মালভুমি, চেটে নেয় পরীর মধু।
কামপাগল পরীর শরীরে তীব্র কামনার আগুন ঝলসে যায়। থাকতে না পেরে বালিসে মাথা দাপাতে শুরু করে পরী। পরীর দেহ ধনুকের মতন বেঁকে ওঠে, উঁচু হয়ে ওঠে বুক আর পেট, মাথা বেঁকে নিচে নেমে আসে। দু’হাত দেহের দুপাশে ছড়ান, বিছানার চাদর মুঠিতে খাচে ধরে। ধিরে ধিরে জিব দিয়ে পরীর মধু চাটতে শুরু করে অভি, মাঝে মাঝে সেই সরু ঝরনা ধারার ফাটলে জিব ঢুকিয়ে দিয়ে পাগল করে তোলে পরীকে। বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠে তীব্র শীৎকার করে ওঠে পরী, সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘামের দানা ফুটে ওঠে, বেঁকে, মুচরে, দুমড়ে যায় পরীর কোমল নধর দেহ পল্লব। বারেবারে মাথার পেছন দিয়ে বালিসে মারে।
অভি ওর মালভূমির ঝরনা ধারা ছেড়ে, পরীর সিক্ত কমনীয় দেহ পল্লবের ওপরে উঠে আসে। পরী জানু ফাঁক করে আহবান জানায় অভির উত্তপ্ত কামাতুর দেহ খানি। মালভুমির ঝরনা ছেড়ে অভির সিক্ত জিব উঠে আসে ওপরে, ঠিক ওর নাভিদেশের কাছে গোল করে জিবের ডগা বুলিয়ে দেয়, আদরের চোটে পাগল হয়ে ওঠে পরী। জিবের ডগা দিয়ে নাভির ভেতর চেটে দেয় আর অভি দাঁত ফাঁক করে আলতো কামর বসিয়ে দেয় নাভির ওপরে থলথলে পেটে।
পরী ওর ঠোঁটের ওপরে পেট চেপে ধরে শীৎকার করে ওঠে, “সোনা, আমাকে আর পাগল করো না, আমি মরে যাব যে।”
পরীর কাতর শীৎকার উপেক্ষা করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে পরীর নাভিদেশ। ক্ষণিকের জন্যেও পরী চোখ খোলেনা, অভি জানে চোখ খুলে প্রেমের খেলা খেলতে ওর আরও সময় লাগবে।
জানুমাঝে অভির তপ্ত কঠিন পুরুষ দন্ড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, পরীর জানুমাঝের কোমল মাংসে বারেবারে ধাক্কা মারে। পরী অনুধাবন করে যে অভির তপ্ত শলাকা ওর নারীসুখের দোরগোড়ায় প্রবেশ করার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছে। দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুপাশে মেলে ধরে পরী, অভি নিজের নিচের অঙ্গ চেপে ধরে পরীর জানুমাঝে। পরীর দেহ পল্লবের দুপাশে হাত দিয়ে ভর করে সামনে ঝুঁকে জিবের ডগা দিয়ে পরীর মধ্যচ্ছদার ওপর দিয়ে বুলিয়ে দেয়, সাথে সাথে মুখের লালা ভিজিয়ে দেয় তপ্ত ত্বক। পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল আকার করে, শ্বাস নিতে থাকে, ঘাড় বেঁকে গেছে পেছনের দিকে। উমত্ত পরী, জানু দিয়ে চেপে ধরে অভির শরীর আর পা উঠিয়ে আনে অভির কোমরের উপরে। শিরদাঁড়ার ওপরে গোড়ালি দিয়ে চাপ দেয় আর অভির কঠিন শলাকার সম্পূর্ণ বহিরাঙ্গ পিষে যায় পরীর সিক্ত পাপড়ির ওপরে। পরী পা দিয়ে অভির কোমর চেপে ধরে বারেবারে আহবান জানায় ওর দেহ কে গ্রহন করতে, ওকে পাগল করে দিতে, নিয়ে যেতে সুখের স্বর্গোদ্যানে।
অভির কঠিন শলাকার মাথা কোমল সিক্ত নারীসুখের পাপড়ি মাঝে ছুঁয়ে যায়, অল্প ফাঁক হয়ে যায় পাপড়ি জোড়া। ক্ষীণ প্রবেশ করে অভি পরীর শরীরে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী। অভি সামনে ঝুঁকে পরে ডান বুকের কঠিন নুড়ি দাঁতের মাঝে নিয়ে নেয়, প্রথমে আলত করে দাঁতে চাপ দেয় অভি, কিছু পরে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কোমল সুগোল বক্ষ আর চুষে নেয় মধুর নুড়ি। পরীর হাত উঠে আসে অভির মাথার ওপরে, দশ আঙ্গুলে খামচে ধরে মাথার চুল, মাথা চেপে ধরে নরম বুকের ওপরে। জানু মাঝে পরী বুঝতে পারে যে অভির শলাকা কিঞ্চিত ওর সুখের গুহার ভেতরে প্রবেশ করেছে।
অভির মাথা আরও এগিয়ে যায়, চলে আসে পরীর মুখের ওপরে। গোলাপের পাপড়ির মতন লাল ঠোঁট চেপে ধরে ঠোঁট দিয়ে, নিচের ঠোঁট ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষে দেয় অভি। পরীর সারা মুখে অভির তপ্ত শ্বাস বয়ে যায়। পরী ওর নিচের ঠোঁট নিজের থথের মাঝে নিয়ে আলতো কামর বসিয়ে দেয়। জিব বের করে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে দেয় অভি। পেশি বিহুল বুকের নিচে পিষে যায় কোমল তুলতুলে বক্ষ জোড়া। হাতের ওপরে হাত বুলিয়ে দুহাতের দশ আঙ্গুল মিলে যায়, দুজনেই হাত চেপে ধরে একে ওপরের, সাপের মতন পেচিয়ে যায় একে ওপরের আঙ্গুল।
শেষ পর্যন্ত পরী আর থাকতে না পেরে, কোমরে মোচর দিয়ে ঠেলে উপরে অথাবার চেষ্টা করে আর সেই সময়ে অভিও ওর ডাকে সারা দেয়। মিলেমিসে একাকার হয়ে যায় দুই দেহ। নারীসুখের দ্বার খুলে যায়, আহবান জানায় উম্মত্ত কঠিন সিংহকে, থেমে থাকেনা অভির সিংহ, ধিরে ধিরে প্রবেশ করে পরীর জানুমাঝের সুখের দ্বারের ভেতরে। মাখনের মাঝে যেন এক তপ্ত ছুরি কেতে ঢুকে পরে। সিক্ত দেয়াল চেপে ধরে শলাকার ত্বক, উষ্ণ মধু ভিজিয়ে দেয় কঠিন অঙ্গ।
পরী অভির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে থাকে যতক্ষণ অভির সিংহ প্রবেশ করে ওর ভেতরে। গলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই কপোত কপোতী, ধিরে ধিরে বিচরন করে সুখের স্বর্গোদ্যানে। বারে বারে সুখের হরিত মালভুমির ওপরে ঘুরে বেড়ায় দুজনে, একে ওপর কে সাপের মতন জড়িয়ে ধরে সারা বিছানার ওপরে গড়াতে থাকে।
অভির চুরান্ত সময়ে পরীর বুকের ওপরে দাঁত বসিয়ে দেয়, পরী ওর পিঠে দশ আঙ্গুলের নখ দিয়ে আঁচর কেটে দেয়, পিঠের ত্বক আঁচরে যায়। অভির বারি মিলিত হয় পরীর সুধার সাথে। অনেক দিনের উন্মুখ অপেখার পরে অভির প্রেয়সী, প্রানের জুঁই ফুল স্বমহিমায়, ফুটে ওঠে স্পিতি নদীর তীরে।
Thanks for reading: ভালবাসার রাজপ্রাসাদঃ ৪র্থ অধ্যায় [২য় পরিচ্ছেদ ] Written By Pinuram, Sorry, my English is bad:)